পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in V)88 মানিক রচনাসমগ্র এই সুদূর পল্লীতে হয়তো সে বসন্ত কখনও আসিবে না। যাহার কোকিল। পিয়ানো, সুবাস এসেন্স, দখিনাবায় ফ্যানের বাতাস। তবু, শশীর মনকে কে বাঁধিয়া রাখিবে? দীর্ঘ জীবন পড়িয়া আছে, পড়িয়া আছে বিপুল পৃথিবী। আজ শশী কামিনী ঝোপেব পাশে কাম্প চেয়ারে বসিয়া বঁাশঝাড়ের পাতা কঁপানো ডোবার গন্ধ-ভরা ঝিরঝিরে বাতাসে উন্মনা হোক, কোলের উপর ফেলিয়া রাখা বইখানার দুটি মলাটের মধ্যে কাম্য জীবনটি তাহার আবদ্ধ থাক, একদিন কেয়ারি করা ফুল বাগানের মাঝখানে বসানো লাল টাইলে ছাওয়া বাংলোয় শশী খাঁচার মধ্যে কেনারি পাখির নাচ দেখিবে, দামি ব্লাউজে ঢাকা বুকখানা শশীর বুকের কাছে স্পন্দিত হইবে,--আলো গান হাসি আনন্দ আভিজাত কীসের অভাব তখন থাকিবে শশীর ? কায়েতপাড়াব পথটি তিন ভাগ অতিক্ৰম করিয়া গেলে শশীর বাডি। হারুর বাড়ি পথের একেবারে শেষে। সেই হারু ঘোষ। খালের ধারে বটগাছটার তলে যে সেদিন অপরাত্যুে বজ্ৰাঘাতে মরিয়া গিয়াছে। মতির জ্বর কমে নাই। সন্ধ্যার সময় শশী তাহাকে দেখিতে গেল। সাবাদিন শশীব সময় ছিল না। সন্ধ্যার সময় হারুব বাড়িতে প্ৰদীপ জ্বলে নাই। হাবুর বউ মোক্ষদা হারুর ছেলে পবানের বউ কুসুমের উপব ভারী খাপ্পা হইয়া উঠিয়াছিল। ব্যাপাবটা বুঝিয়া দ্যাখে। গৃহস্থ বাড়ি। সন্ধ্যা আসিযাছে। বাড়িতে একটা বউ আছে। অথচ সন্ধ্যাদীপ জ্বলে নাই। গলায় দড়ি দিয়া বউট মরিয়া যায না কেন ? কুসুম গিয়াছিল ঘাটে। ফিবিয়া আসিয়া জলের কলসি নামাইয়া ধীরে সুস্থে সে কাপড় ছাড়িল। তারপর জুলিতে গেল প্ৰদীপ। তাহাব নির্লজ্জ ধীরতা মোক্ষদাকে একেবাবে খ্যাপাইয়া তুলিল! কুসুমের হাত হইতে প্ৰদীপটা ছিনাইয়া লইয়া রান্নাঘরে গিয উনানে পাটখড়ি ধবাইয়া সে প্ৰদীপ জ্বলিল। তারপর তাড়াতাডি পাব হইতে গিয়া শুকনো উঠানে সে কেমন করিয়া পডিয়া গেল কে জানে! শূন্যে তুলিয়া শোবাব ঘরের সামনে দাওয়ায় নামাইয়া দিল। তেইশ বছরের বঁাজা মেয়ে, গায়ে তাহার জোবি কম নয় । A. কিছুক্ষণ বাড়িতে আব্ব কান পাতা যায না। মোক্ষদা গলা ফাটাইয়া শাপিতে থাকে। ছেলে কোলে কুঁচি ব্যাপার জানিতে আসিলে ছেলেটা তাহার জুড়িয়া দেয় কান্না। ওদিকের ঘরে বুচির মুমূর্য পিসি বিছানায় উঠিয়া বসিয়া আর্তস্বরে বলিতে থাকে, কী হল রে? ও কুঁচি, ওলো কুসুম, কী হল রে ? হেই ভগবান, কেউ কি সাড়া দেবে! বড়ো ঘলের অন্ধকারে মতি শুইয়া ছিল, সেও তাহার ক্ষীণকণ্ঠ যতটা পাবে উচুতে তুলিয়া ব্যাপার জানিতে চায়। অবিচলিত থাকে শুধু কুসুম। দাওয়ার নীচে খানিকক্ষণ চুপচাপ দাঁড়াইয়া সে মোক্ষদার গাল Chice | তারপর রান্নাঘর হইতে একটা জুলন্ত কাঠ আনিয়া ঢুকিতে যায় শোবার ঘবে। আঘাতের বেদনা ভুলিয়া মোক্ষদা হাউমাউ করিয়া ওঠে। ও কী লো বউ, ও কী? ঘরে-দোরে আগুন দিবি না কি ? আগুন দেব কেন মা ? পিলসুজের দীপটা জ্বালব। উনুনের কাঠ এনে দীপ জ্বালবি? দ্যাখ বুচি দ্যাখ, মেলেচ্ছ হারামজাদি ঘরের মধ্যে চিতা জেলে দিতে চলল, চেয়ে দ্যাখ! কুসুম চোেখ পাকাইয়া বলে, গাল দিয়ে না বলছি অত করে, দিয়ে না। আমপাতা দেখছি না। হাতে ? কাঠ থেকে যদি দীপ জ্বালব, পাতা নিয়ে যাচ্ছি কী চিবিয়ে খাব বলে নাকি?