পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in ○8ぐう মানিক রচনাসমগ্র ঘরে গিয়া শশী মতিকে জিজ্ঞাসা করিল, কী কষ্ট হচ্ছে রে মতি ? মতি তাহা জানে না। সে আন্দাজে বলিল, গা ব্যথা কচ্ছে ছােটােবাবু, তেষ্টা পেয়েছে। কানে নল লাগাইয়া শশী মতির বুকটা পরীক্ষা করিয়া দেখিল। এ পরীক্ষায় মতির বড়ো লজা করে, বুকের মধ্যে টিপটিপ করিতে থাকে। স্টেথোস্কোপের নল বাহিয়া তাহা শশীর কানে পৌঁছায়, সে অবাক হইয়া বলে, নিশ্বাস বন্ধ করে থাকতে তোকে কে বলেছে মতি, জোরে জোরে নিশ্বাস নে!-কুঁচি আলোটা উচু করিয়া ধরিয়াছে, শশী মতির মুখের দিকে তাকায়। ভাঙা লািঠনের রাঙা আলোতে মতির রং যেন মিশিয়া গিয়াছে। নিঃশব্দ পদে কুসুম যে কখন পিছনে আসিয়া দাঁড়াইয়াছিল! বুকে ওর হয়েছে কী? অতি পরীক্ষে কীসের ? একটু সর্দি বসেছে বলে মনে হচ্ছে পরানের বউ। গরম তেল মালিশ করে দিও। কুসুম ভীরুকণ্ঠে বলে, সর্দি ঠিক তো ছোটােবাবু? পরীক্ষের রকম দেখে ভয়ে বুকে কাপন নেগেছে মা, ক্ষয় রোগেই বা ধরল।-ওলো মতি, বলিনি তোকে ? বলিনি। জুরাগায়ে হাওয়ায় গিয়ে বসিস নে, ঠান্ড লেগে মরবি ? শশী বাহিরে গিয়া একটু বসে। মোক্ষদা। তখন সবিস্তারে তাহাকে শোনাযা তাতার আছড়ে খাওয়াব বৃত্তান্ত। বলে, বউ আমাকে ঠেলে দিয়েছে বাবা, বউ নিয়ে হয়েছে আমার মরণ।--নিচু গলায় আবোলতাবোল অনেকক্ষণ মোক্ষদা বকে। হারু আজ মরিয়াছে দিন সাতেক, তার কথা উল্লেখ করিয়া সে এখন আর সুর করিয়া কঁদে না, বারবার শুধু চোখ মোছে গলাটা ধরিয়া আসে : স্বামীর শোকে ভিজিয়া আসা গলায থাকিয়া থাকিয়া নিন্দা করে সে কুসুমের,—শুনিয়া মনে হয সবই বুঝি সতা বলিতেছে। কুঁচি চুপ করিয়া শোনে, কথাটি বলে না, না দেয়। সায়, না করে প্রতিবাদ। আর রান্নাঘরে শশীকে শোনাইযা কুসুম কবে যাত্রার দলেব গান, টানা গুনগুনানো সুরে, অস্পষ্ট, ভীরু, গলায়। সত্যসত্যই পাগল নাকি কুসুম ? * তারপর রান্নাঘর হইতে বাহির হইয়া কুসুম কোথায় যায় কে বলিবে। শশী খানিক পাবে বিদায় নেয়। হারুর বাড়ি কায়েতপাড়ার পথটার ঠিক উপরে নয়, দুপাশে বেগুনখেতের মাঝখােন দিয়া হাত তিনেক চওড়া খানিকটা পথ পার হইয়া রাস্তায় পড়িতে হয়। শশী তাড়াতাড়ি এই পথটুকু পার হইয়া যাইতেছিল, ডাইনে বেগুনখেতেব বেড়াবা ওপাশ হইতে কুসুম বলিল, ছোটোবাবু শুনুন! শশী অবাক হইযা বলিল, তুমি ওখানে কী করছ বউ ? সাপে কামড়ালে যে ? কুসুম বলিল, সাপে আমাকে কামড়াবে না ছোটােবাবু, আমার আদেষ্টে মরণ নেই। শশী হাসিয়া বলিল, কী আবার হল তোমার ? পর্যানের বউ বলে যে ডাকলেন আজ ? পর্যানেল বউ বললে আমার গোসা হয় ছোটোবাবু। পিসি বলত,--বুচির ছোটাে পিসি, ও বছর যে সগ্যে গেল, এমনি গাল তাকে একদিন দিলাম---- আমাকেও না হয় দাও দুটাে গাল। তাই বললাম? হাঁ ছোটােবাবু, তাই বললাম? পূজ্য মানুষ আপনি, আপনাকে পুজো করে আমাদের পুণ্যি হয়— গড়গড় করিয়া মুখস্থ বুলির মতো একরাশ তেষামোদের কথা কুসুম বলিয়া যায়, শুনিতে মন্দ লাগে না। শশীর। কত বছর আজ সে কুসুমের এমনি পাগলামি দেখিতেছে। ওর এই সব খাপছাড়া কথায় ব্যবহারে একটি যেন মিষ্টি ছন্দ আছে। বাড়ি যাও বউ, ভাত পোড়া লাগবে।