পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in ԳՀ মানিক রচনাসমগ্ৰ টিমটিমে কেরোসিনের আলো জ্বালা মামার অতটুকু দোকানে কে জিনিস কিনিতে আসিবে ? মামার যেমন কাণ্ড, দোকান দিবার আর জায়গা পাইল না। মামার উৎসাহের অন্ত নাই, বিধান ও খুঁকি দোকান-দোকান করিয়া পাগল, মণিরও দুবেলা দোকানে যাওয়া চাই। মামা ওদের বিস্কুট ও লজেনচুস দেয়, দোকানের আকর্ষণ ওদের কাছে তাহাতে আরও বাড়িয়া গিয়াছে। জিনিস বিক্ৰয় করিবার শখ বিধানের প্রচণ্ড। বলে, এবার যে খদের আসবে তাকে আমি জিনিস দেব দাদু, আঁ্যা ? মামা বলে, পারবি কী খোকা, খদের বিগড়ে দিবি শেষে। কিন্তু অনুমতি মামা দেয়। বিধান ছোটাে শো-কেসটির পিছনে টুলটার উপরে গভীর মুখে বসে, মামা কোণের বেঞ্চিটর উপর বসিয়া চশমা চোখে দিয়া বিড়ি টানিতে টানিতে খবরের কাগজ পড়ে। ক্ৰেতা যে আসে হযতো সে পাড়ার ছেলে, ঈৰ্ষার দৃষ্টিতে বিধানের দিকে চাহিয়া বলে, কী রে বিধু!—বিধান বলে, কী চাই ? সে পাকা দোকানি, কেনাবেচার সময় তার সঙ্গে বন্ধুত্ব অচল, খোশগল্প করিবাব তার সময় কই ? চশমার ফাক দিয়া মামা সহকারীর কার্যকলাপ চাহিয়া দ্যাখে, বলে, কালি ? ওই ও কোেনার টিনের কীেটােতে——দু বড়ি এক পয়সায়, কাগজে মুড়ে দে বোকা! এদিকে দোকান চলে ওদিকে মামা আজ দশটাকা কাল পাঁচটাকা সংসার খরচ আনিয়া দেয়। মামার চারিদিকে রহস্যের ভাঙা আবরণটি আবার যেন গড়িয়া উঠিতে থাকে। পাডার লোকে এতকাল মামাকে অতিথি বলিয়া খাতির করিত, এখন প্রতিবেশী গৃহস্থেব প্রাপ্য সহজ সমােদর গিয়াছে, খুব যারা বাবু, দুএক পয়সার জিনিস কিনিতে মামাকে তাদের কেহ তুমি পর্যন্ত বলিয়া বসে । মামা বলে, কী চাই বললে ? পরিমল নাস্যি? ওই ও দোকানে যাও! অপমান করিয়া মামার কাছে কারও পার পাওয়ার জো নাই। বৈশাখ মাস শেয হইলে শ্যামা একদিন বলিল, দোকানের হিসাবপত্র করলে মামা, লাভটাভ হ’ল ? মামা বলিল, লাভ কিরে শ্যামা, বসতে না বসতে কি লাভ হয় ? খরচ উঠক আগে। শ্যামা বলিল, নতুন দোকান দিয়ে বসার খরচ দুএক মাসে উঠবে না তা জানি মামা, তা বলিনি, বিক্রির ওপোর লাভূটাভ কী রকম হল হিসাব করনি ?—কত বেচলে, কেনা দাম ধরে কত লাভ রইল, করনি সে হিসাব ? মামা বলিল, তুই আমাকে দোকান-করা শেখাতে আসিসনে শ্যামা! এবার শ্ৰীষ্মের ছুটি হওয়ার আগে ক্লাসের ছেলেদের অনেকেই নানা স্থানে বেড়াইতে যাইবে শুনিয়া শুনিয়া বিধানের ইচ্ছা হইয়াছিল। সেও কোথাও যায়,-কোথায় যাইবে ? কোথায় তাহার কে আছে, কার কাছে সে গিয়া কিছুদিন থাকিয়া আসিতে পারে ? বনগাঁ গেলে হইত-মন্দাকে শ্যামা চিঠি লিখিয়াছিল, মন্দা জবাব দিয়াছে এখন সেখানে চারিদিকে বড়ো কলেরা বসন্ত হইতেছে—এখন না গিয়া বিধান যেন পূজার সময় যায়। বিষ্ণুপ্রিয়ারা এবার দার্জিলিং গিয়াছে। তখনও স্কুলের ছুটি হয় নাই, শঙ্কর সঙ্গে যাইতে পারে নাই। বিষ্ণুপ্রিয়া এখানে থাকিবার সময় শঙ্কর বোধ হয় সাহস পাইত না, বিষ্ণুপ্রিয়া দার্জিলিং চলিয়া গেলে একদিন বিকালে সে এ বাড়িতে আসিল। শ্যামা বারান্দায় তরকারি কুটিতেছিল, বিধান কাছেই দেয়ালে ঠেস দিয়া বসিয়া ছেলেদের একটা ইংরাজি গল্পের বই পড়িতেছিল, মুখ তুলিয়া শঙ্করকে দেখিয়া সে আবার পড়ায় মন দিল। শঙ্করকে বসিতে দিয়া শ্যামা বলিল, কে এসেছে। দ্যাখ খোকা। বিধান শুধু বলিল, দেখেছি।