পাতা:মানুষের ধর্ম্ম - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মানুষের ধর্ম্ম

বর্ত্তমান সেখানে তার মধ্যে রহস্য কিছুই নেই। কিন্তু যেখানে তারা নিজের জীবনসীমাকে অতিক্রম করে সমস্ত দেহের জীবনে সত্য সেখানে তারা আশ্চর্য্য, সেখানে তারা আপন স্বতন্ত্র জন্মমৃত্যুর মধ্যে বদ্ধ নয়। সেইখানেই তাদের সার্থকতা।

শোনা যায় প্রতি সাত বছর অন্তর মানুষের দেহে এই জীবকোষগুলির পরিবর্ত্তন ঘটে। তারা বিদায় নেয় অর্থাৎ তাদের পৃথক সত্তা থাকে না। কিন্তু তাদের মধ্যে যে-সত্তা সমস্ত দেহের আয়ুর অন্তর্গত অর্থাৎ যেটা তাদের স্বদৈহিক নয় বিশ্বদৈহিক সেই সত্তা সমস্ত দেহের জীবনপ্রবাহে থেকে যায়।

দেহে কখনো কখনো কর্কটরোগ অর্থাৎ ক্যান্সার জন্মায় সেই ক্যান্সার একান্তই স্বতন্ত্র, বলা যেতে পারে তার মধ্যে দেহাত্মবোধ নেই। সমগ্র দেহের সে প্রতিকূল। দেহের পক্ষে এ'কেই বলা যায় অশুভ।

মানুষের দেহের জীবকোষগুলির যদি আত্মবোধ থাকত তাহলে একদিকে তারা ক্ষুদ্রভাবে আপনাদেরকে স্বতন্ত্র জানত, আবার বৃহৎভাবে নিজেদেরকে জানত সমগ্র দেহে। কিন্তু জানত অনুভবে, কল্পনায়,—সমগ্র দেহকে প্রত্যক্ষত ও সম্পূর্ণত জানা সম্ভব হোত না। কেননা এই দেহ শুধু যে বর্ত্তমানে অধিষ্ঠিত তা নয়, এই দেহে রয়েচে তার অতীত, অপেক্ষা করচে তার