পাতা:মানুষের ধর্ম্ম - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৮
মানুষের ধর্ম্ম

কি, অন্যায় প্রণালী,—ঘর-গড়া নরকের তর্জ্জনীসঙ্কেতে নিরর্থক অন্ধ আচারের প্রবর্ত্তন। রাষ্ট্রতন্ত্রে এই বুদ্ধিরই প্রতীক আণ্ডামান, ফ্রান্সের ডেভিল আইলাণ্ড, ইটালির লিপারি দ্বীপ। এদের ভিতরের কথা এই যে, বিশুদ্ধ শ্রেয়োনীতি ও লোকস্থিতি এক তালে চলতে পারে না। এই বুদ্ধির সঙ্গে চিরদিনই তাঁদের লড়াই চ’লে এসেচে যাঁরা সত্যকে শ্রেয়কে মনুষ্যত্বকে চরম লক্ষ্য ব’লে শ্রদ্ধা করেন।

 রাজ্যের বা সমাজের উপযোগিতারূপে শ্রেয়ের মূল্যবিচার এ প্রবন্ধের উদ্দেশ্য নয়। শ্রেয়কে মানুষ যে স্বীকার করেচে সেই স্বীকৃতির আশ্রয় কোথায়, সত্য কোথায়, সেইটেই আমার আলোচ্য। রাজ্যে সমাজে নানাপ্রকার স্বার্থসাধনের ক্ষেত্রে প্রতিদিনের ব্যবহারে তার প্রতিবাদ পদে পদে, তবুও আত্মপরিচয়ে মানুষ তাকে শ্রেষ্ঠ স্থান দিয়েচে, তাকেই বলেচে ধর্ম্ম অর্থাৎ নিজের চরম স্বভাব, শ্রেয়ের আদর্শসম্বন্ধে দেশকালপাত্রভেদে যথেষ্ট মতভেদ সত্ত্বেও সেই শ্রেয়ের সত্যকে সকল মানুষই শ্রদ্ধা করেচে এইটেতে মানুষের ধর্ম্মের কোন্‌ স্বরূপ প্রমাণিত হয় সেইটে আমি বিচার করেচি। হয় এবং হওয়া উচিত এই দ্বন্দ্ব মানব-ইতিহাসের আরম্ভকাল থেকেই প্রবলবেগে চলচে, তার কারণ বিচার করতে গিয়ে বলেচি মানুষের অন্তরে এক দিকে পরমমানব