পাতা:মা - ম্যাক্সিম গোর্কি - বিমল সেন.pdf/১১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মা

 মা তাকে বললেন, ছি বোন, যেতে দাও, ভয় পেয়োনা, ভয় কি? আমিও প্রথম প্রথম ভয় পেতুম; কিন্তু এখন ঐ দেখ, আমার ছেলে সবার আগে—নিশান হাতে—ঐ···

 শঙ্কিতা মাতার কানে তা গেলো না। তিনি চেঁচিয়ে উঠলেন আর্ত কণ্ঠে, ডাকাতরা করছে কি? কোথায় যাচ্ছে? সৈন্যেরা যে ওদের মেরে ফেলবে গো!···

 মা বললেন, অধীর হয়োনা বোন! মহৎ কাজের ধরণই এই! এই যীশুখৃস্ট···তিনিই কি যীশুখৃস্ট হ’তে পারতেন, যদি না শত সহস্র লোক তাঁর জন্য মরতো?

 গানের সুর তখন আরও চ’ড়ে গেছে—

জারের যখন সৈন্য চাই
ছেলে দাও, নইলে রক্ষা নাই···

 শিজভ জোর গলায় ব’লে উঠলো, সাবাস্ জোয়ান, ভয়ডর কিছু নেই তোমাদের।···আমার ছেলে, সে যদি আজ বেঁচে থাকতো! কারখানা তাকে খুন করেছে। হাঁ, খুন করেছে।

 মার বুকের রক্ত দ্রুততালে নেচে উঠলো। কিন্তু ভিড়ের অসম্ভব চাপে তিনি কোণঠাসা হয়ে এক দেয়ালের পাশে দাঁড়িয়ে রইলেন। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখতে লাগলেন, জন-স্রোতের বিচিত্র গতি। হাজারে হাজারে উন্মত্ত লোক···মনে হয় যেন একটা বৃহৎ কাঁসার জয় ঢাকের প্রলয়ংকর ধ্বনি তাদের মাতিয়ে তুলেছে···কেউ মাতছে যুদ্ধের আকাঙ্ক্ষায়, কেউ মাতছে একটা অস্পষ্ট আনন্দে, একটা নতুন কিছুর সম্ভাবনায়, একটা জ্বলন্ত কৌতূহলে! বহু বছরের পুঞ্জীভূত কণ্টকিত ব্যথার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ যেন আজ সংগীতের মধ্য দিয়ে বেরুচ্ছে।

১১৫