পাতা:মা - ম্যাক্সিম গোর্কি - বিমল সেন.pdf/১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মা

 মা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলেন। ছেলে মিথ্যে বলেনি। তিনি নিজেই জানেন, শুড়িখানা ছাড়া আর কোনাে স্থান জোটেনা মজুরদের আনন্দ করার···মদ ছাড়া আর কোনাে বিলাসিতা তাদের কপালে নেই, তবু বলেন, খাস্‌নি, খাস্‌নি, বাবা! তাের বাবা মদ খেয়ে আমাকে জীবন-ভোর দুঃখ-দুর্দশায় ডুবিয়ে রেখে গেছেন···তুই তাের মায়ের ওপর দয়া কর্। করবিনি, বাবা?

 পেভেল মায়ের কোমল-কাতর কথাগুলি কান পেতে শােনে। পিতার জীবদ্দশায় মা ছিলেন নির্যাতিতা, উপেক্ষিতা, ভীতা···সে কথা মনে পড়ে। পিতার ভয়ে বাইরে বাইরেই ঘুরতো ব’লে মা যেন তার কাছে প্রায় অপরিচিতই র’য়ে গেছেন। আজ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে মায়ের দিকে চাইলাে। লম্বা, ঈষৎ নম্র দেহ দীর্ঘবর্ষব্যাপী শ্রমে এবং স্বামীর নির্যাতনে তা’ যেন ভেঙে পড়েছে···চলেন নিঃশব্দে, একদিকে ঈষৎ হেলে···সর্বদা যেন কোন কিছু থেকে আঘাত পাবার ভর। প্রশস্ত গােলগাল মুখ···কপালে চিন্তার রেখা···বার্ধক্যে চর্ম লােল···এক জোড় কালাে চোখ উদ্বেগ এবং বিষাদে ভরা···ডান ভুরুতে একটা গভীর কাটা দাগ, ফলে ভুরুটা যেন একটু উঁচুতে ঠেলে উঠেছে···ডান কানটাও একটু লম্বা বাম কানটার চাইতে···দেখলে মনে হয়, কান যেন কি শুনবে এই আতঙ্কে উন্মুখ! গভীর কালাে চুলের মাঝে মাঝে সাদা সাদা গুচ্ছ, যেন সেগুলি আঘাতের চিহ্ন। কোমল, করুণ···বাধ্য···এই মা। দু’চোখ দিয়ে তার জল গড়ায় ধীরে ধীরে।

 ছেলে কোমল অনুনয়-ভরা কণ্ঠে বললাে, চুপ কর, মা, কেঁদোনা, আমায় জল দাও।

 মা উঠলেন, বললেন, বরফজল এনে দিচ্ছি।

 কিন্তু মা যখন ফিরলেন তখন সে নিদ্রিত।

১৬