পাতা:মা - ম্যাক্সিম গোর্কি - বিমল সেন.pdf/৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মা

প্রত্যেক সংস্কারকে তারা সংশয়ের চোখে দেখে···ভাবে, শেষপর্যন্ত এ শুধু তাদের বােঝা বাড়াবে মাত্র। তাই তারা নবাগতদের এড়িয়ে চলে।

 এমনি করে মজুরদের পঞ্চাশ বছরের জীবন কেটে যায়।


 কামার মাইকেল ভ্লাশভের জীবনও কেটে যায় এমনি ধারায়। গম্ভীর কালাে মুখ, সন্দেহ-তীক্ষ্ণ দৃষ্টি, ছোট ছােট চোখ, অবিশ্বাস-ভরা হাসি, উদ্ধত ব্যবহার, কারখানার ফোরম্যান এবং সুপারিণ্টেণ্ডেণ্টকেও কেয়ার করে না, কাজেই কামায় কম। ফি ছুটির দিনে কাউকে মারা চাই; কাজেই পাড়ার সবাই তাকে ভয় করে, অপছন্দ করে। মারতে গিয়েও ভয় পেয়ে পিছিয়ে আসে। শত্রুর সাড়া পেলেই ভ্লাশভ হাতের কাছে গাছ, পাথর, লােহা যা’ পায় তাই নিয়ে রুখে দাঁড়ায়। সব চেয়ে ভয়ানক তার চোখদুটো···তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে যেন লােহার শলাকার মতো শত্রুকে বিদ্ধ করে···সে চোখের সাম্‌নাসাম্‌নি যে পড়ে সেই বােঝে কী এক হিংস্র ভয়-ডরহীন নিষ্ঠুর জল্লাদের কবলে সে পড়েছে। মুখের-ওপরে-এসে-পড়া ঘন চুলের ফাঁকে ফাঁকে তার হলদে দাঁত ভয়ংকরভাবে কট্‌মট্ করতে থাকে। ‘দুরহ নারকী কীট’—ব’লে সে তর্জন ক’রে ওঠে···শত্রুদল চকিতে রণে ভঙ্গ দিয়ে গালি দিতে দিতে পালায়। মাথা খাড়া করে দাঁতের মধ্যে ছােট মোটা একটা চুরুট চেপে সে তাদের পিছু নেয়, আর চ্যালেঞ্জ করে, কোন্ ব্যাটা মরতে চাস্, আয়। কেউ চায়না।

 এমনি সে খুব কম কথা বলে, শুধু ‘নারকী কীট’ এই কথাটা তার মুখে লেগেই আছে। কারখানার কর্তাদের থেকে শুরু করে পুলিসদের পর্যন্ত সে ঐ ব’লে ডাকে। বাড়িতে গিয়ে বউকে পর্যন্ত বলে, ‘নারকী কীট’ আমার পােশাক যে ছিঁড়ে গেলো, দেখতে পাস না?

১২