পাতা:মা - ম্যাক্সিম গোর্কি - বিমল সেন.pdf/৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মা

 তুমি কাজ করবে, আর তার দুঃখ ভোগ করবে অন্যে!

 রাইবিন জবাব দিলো, তুমি ভুল বুঝেছো, পেভেল! প্রথমত, শিক্ষকরা বুর্জোয়া, তাদের কোনো ভয় নেই। কর্তারা শাস্তি দেবেন যেসব পল্লিবাসীর কাছে বই পাবেন, তাদেরই। দ্বিতীয়ত, শিক্ষকদের বইয়েতে কি নিষিদ্ধ কথা কিছু নেই? আছে, তবে তা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে লেখা, আমার বইয়ের মতো সোজ। খোলাখুলি লেখা নয়। তৃতীয়ত, বুর্জোয়াদের সঙ্গে বনিবনাও ক’রে চলতে চাই না আমি। পায়ে যে হাঁটছে তার কি সাজে ঘোড়-সওয়ারের সঙ্গে বন্ধুত্ব করা? সত্য কথা বলতে কি, ওদের এই গায়ে-পড়ে দেশের কাজ করাটাকে আমি দস্তুরমতো সন্দেহ করি। ওদের উদ্দেশ্যটা নিশ্চয়ই খুব সাধু নয়। তাই ওরা বিপদে পড়লে আমি দুঃখিত হব না। সাধারণ পল্লিবাসীর ওপর অবশ্য এ রকমটা করতুম না।

 মা বললেন, কিন্তু কর্তাদের মধ্যেও এমন দু’চারজন আছেন, যারা আমাদের জন্য প্রাণ দেন।

 রাইবিন বললো, তাদের কথা স্বতন্ত্র কিন্তু বেশির ভাগের সঙ্গেই আমাদের অহি-নকুল সম্পর্ক। আমরা ‘হাঁ’ বললে, ওরা বলবে ‘না’ আর আমরা ‘না’ বললে, ওদের ‘হাঁ’ বলা-ই চাই—আমার পেট ভরে খেলে ওদের ঘুম হয় না, এই ওরা। পাঁচ বছর ধরে আমি শহরে শহরে, কারখানায় কারখানায় ঘুরেছি, তারপরে গেলুম গ্রামে—কিন্তু গিয়ে যা দেখলুম, তাতে বুঝলুম, আর এমন করে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। তোমরা শহরে থাকো, ক্ষুধা কি জানো না, অত্যাচার কি প্রত্যক্ষ কর না। কিন্তু গ্রামে সমস্ত জীবন ক্ষুধা মানুষের সঙ্গী হয় ছায়ার মতো— ক্ষুধা মানুষের আত্মাকে ধ্বংস করে—তার আকৃতি থেকে মানুষের ছাপ লোপ ক’রে

১০২