পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/১০১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
মোতিঝিল
৯৫


 এইরূপ রমণীয় স্থানে আসিলে অতীতস্মৃতি আপনা হইতে মানসপটে উদিত হয় -অতীত-গৌরব হৃদয়কে বড়ই ব্যাকুল করিয়া তুলে! তখন অতীতের কত কথা মনে পড়ে, কত ঘটনার ছবি যবনিকাপাতের ন্যায় মানসচক্ষের সম্মুখ দিয়া অপসারিত হইতে থাকে, কত মধুর ভাবে হৃদয় ভরিয়া যায়। আমরা অতীতের সে মাধুর্যবর্ণনে অক্ষম। যদি কোন মহাকবি আপনার বিশ্বব্যাপী হৃদয় লইয়া এইরূপ মনোমোহকর স্থানে উপস্থিত হন, তিনিই ইহার বর্তমান রমণীয়তার সহিত অতীতের মধুর স্মৃতি বিজড়িত করিয়া ভুবনমোহন চিত্র অঙ্কিত করিতে পারেন। আমাদের কার্য অন্যরূপ; আমরা ঘটনাবলীর নীরস বিন্যাসের জন্য উপস্থিত; সুতরাং আমরা এক্ষণে তাহাই দেখাইতে চেষ্টা পাইব।

 মোতিঝিল বর্তমান মুর্শিদাবাদের দক্ষিণ-পূর্বাংশে অর্ধক্রোশ দূরে অবস্থিত। পূর্বে ইহা ভাগীরথীর গর্ভে ছিল বলিয়া অনুমান হয়।[১] ভাগীরথী মুর্শিদাবাদের অনেক স্থানে ভ্রমণ করিয়া ভিন্ন ভিন্ন গতি অবলম্বন করিয়াছেন। পুরাতন খাদগুলি কোন কোন স্থানে শুষ্ক, কোথাও বা বদ্ধ বিলে পরিণত হইয়াছে; মোতিঝিল ইহার একটি প্রকৃষ্ট দৃষ্টান্ত। কত কাল পূর্বে মোতিঝিল স্রোতঃশালিনী ভাগীরথীর গর্ভ ছিল, তাহা নির্ণয় করা দুঃসাধ্য। উভয় পার্শ্বের প্রবাহ রুদ্ধ হওয়ায় ইহা অশ্বপাদুকাকৃতি ঝিলে পরিণত হইয়াছে। ইহার গর্ভে অনেক শুক্তি পাওয়া যাইত বলিয়া ইহা মোতিঝিল নামে অভিহিত হইয়া থাকে।[২] কাশ্মীর, লাহোর প্রভৃতি স্থানেও এই নামের জলাশয় দৃষ্ট হয়। খ্রীস্টীয় অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্য হইতে মোতিঝিলের বিবরণ মুর্শিদাবাদের ইতিহাসে দেখিতে পাওয়া যায়। যক্কালে নওয়াজে মহম্মদ খা ঁসা ঁআমেদ জঙ্গ ইহার সুন্দর অবস্থান দেখিয়া পশ্চিম তীরে আপনার প্রাসাদাদি নির্মাণ করেন, সেই সময় হইতে ইহার প্রকৃত বৃত্তান্ত আমরা জানিতে পারি। কিন্তু ইতিহাসে উল্লিখিত না হইলেও খ্রীস্টীয় ষোড়শ শতাব্দীর শেষ ভাগে, অথবা সপ্তদশ শতাব্দীর প্রথমে ইহার পূর্ব তীরে রাধামাধব মূতির প্রতিষ্ঠা হইয়াছিল। তদবধি এই স্থানের কথা সাধারণে অবগত আছে। সম্ভবতঃ তৎকালে মোতিঝিল ভাগীরথীর গর্ভেই অবস্থিত ছিল।

 আলিবর্দী খাঁ মহবৎজঙ্গ মহারাষ্ট্রীয় ও আফগানদিনের দমনার্থ জীবনের অধিকাংশ সময় সমরক্ষেত্রে যাপন করিয়াছিলেন। মৃত্যুশয্যায় শায়িত হইয়া তিনি প্রিয়তম হইবে। তাঁহারা ইহাও বলে যে, নওয়াজে মহম্মদ খাঁর মস্‌জেদেও নাকি ধন প্রোথিত আছে।

  1. রেনেল, ডাক্তার বি. হামিল্টন প্রভৃতির এই মত। হণ্টার বলেন, কেহ কেহ বলিয়া থাকেন যে, ইহার তীরস্থ অট্টালিকানির্মাণের ইষ্টকের জন্য ইহাকে অশ্বপদাকারে খনন করা হইয়াছিল, ইহা সঙ্গত বলিয়া বোধ হয় না।
  2. এই সকল শুতিগর্ভস্থিত মোতিচুর্ণে নবাবদিগের তাম্বুলসেবন হইত বলিয়া প্রবাদ আছে।