পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/১৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
পলাশী

জমি দেখা যায়; সেগুলি ইংরেজদিগের বুরুজের চিহ্ন বলিয়া লোকে নির্দেশ করিয়া থাকে। তথায় কতিপয় বিষবৃক্ষ জন্মগ্রহণ করিয়াছে। এই স্থান হইতে নবজাত আম্রবৃক্ষ পর্যন্ত মধ্যে মধ্যে পরিখার চিহ্ন দেখা যায়, তাহা আম্রকুঞ্জের পূর্বসীমা বলিয়া কথিত হইয়া থাকে এবং অদ্যাপি ঐ স্থানকে লোকে লাখবাগও বলিয়া থাকে।

 প্রাতঃস্মরণীয়া রানী ভবানী লক্ষ আম্রবৃক্ষের বাগান করিয়াছিলেন বলিয়া শ্রুত হওয়া যায়। পলাশী পরগণার কিয়দংশ এককালে তাঁহারই জমিদারীর অন্তর্ভূত ছিল, তজ্জন্য উক্ত প্রবাদ নিতান্ত অমূলক বলিয়া বোধ হয় না। লাখবাগ বা অষ্টাদশ শতাব্দীর আম্রকুঞ্জ বর্তমান না থাকিলেও ঐ সমস্ত চিহ্নের দ্বারা তাহার স্থান নির্ণয় করা যাইতে পারে। পুরাতন বাঙ্গলার নিকট একটি পুষ্করিণী দেখিতে পাওয়া যায়, তাহার নাম কালীকূপ। কালীকুপ যুদ্ধস্থলের পুষ্করিণী নহে; ভাগীরথীর জলপ্লাবনে বাঁধ ভগ্ন হওয়ায় ইহার উৎপত্তি হইয়াছে বলিয়া অনুমিত হয়। পূর্বোক্ত বাঙ্গলা হইতে পশ্চিম দিকে বর্তমান চরভূমিতে স্থানীয় লোকে নবাবের শিকারভবনের স্থান নির্দেশ করিয়া থাকে। ১৭৮o খ্রীঃ অব্দে হজ সাহেব তাহা দর্শন করিয়াছিলেন। ১৬ রেনেলের মানচিত্র অঙ্কনের সময়ও তাহা বিদ্যমান ছিল। অর্মের লিখিত বিবরণানুসারে ও রেনেলের পলাশীযুদ্ধক্ষেত্রের চিত্রদর্শনে এইরূপ প্রতীতি হয় যে, রায়দুর্লভের দক্ষিণ পরিখার সম্মুখেই নবাবের বুরুজ নির্মিত হইয়াছিল। যে-স্থানে নবাবের বুরুজ নির্মিত হয়, অদ্যাপি তথায় তাহার কোন কোন চিহ্ন দেখিতে পাওয়া যায়। তাহার পূর্বদিকের অংশকে আজিও লোকে বুরুজডাঙ্গা কহে।

 এই বুরুজডাঙ্গা বর্তমান লাখবাগ হইতে প্রায় এক ক্রোশ উত্তর-পূর্বে। মুর্শিদাবাদ হইতে যে-সড়ক কৃষ্ণনগর পর্যন্ত গিয়াছে, তাহারই উত্তর-পূর্বে একডালা নামক গ্রামের দক্ষিণে এবং সেজো গ্রামের বিলের পশ্চিমে এই বুরুজডাঙ্গা দৃষ্ট হয়। অষ্টাদশ শতাব্দীর সড়ক পলাশীযুদ্ধের সময় আম্রকুঞ্জের নিকট দিয়াই গিয়াছিল; রেনেলের কাশীমবাজার দ্বীপের মানচিত্রে ইহাই নির্দিষ্ট হইয়াছে। বর্তমান সড়ক অষ্টাদশ শতাব্দীর আম্রকুঞ্জ ও বর্তমান তেজনগর হইতে অর্ধ ক্রোশেরও অধিক উত্তরে, লোকনাথপুর নামক গ্রামের দক্ষিণ দিয়া প্রথমে পূর্বে, পরে দক্ষিণাভিমুখে গমন করিয়াছে। এই সড়ক মুর্শিদাবাদ ও নদীয়া জেলার সীমা। বিম্বকুঞ্জ হইতে অর্ধক্রোশেরও কিছু অধিক উত্তরে প্রান্তর-মধ্যে নূতনগ্রাম-নামে নবস্থাপিত গ্রামের নিকট একটি নিম্নভূমি দেখা যায়। সেজো গ্রামের বিলের পশ্চিম পর্যন্ত এই নিম্নভূমি দৃষ্ট হইয়া থাকে; ইহাই নবাব-শিবিরের পরিখা। রেনেলের মানচিত্রনির্দিষ্ট ইংরেজ-বুরুজ হইতে নবাব-শিবিরের দূরত্বের সহিত বিল্বকুঞ্জ হইতে ইহার দূরত্ব সমান হয়। এই পরিখা প্রথমে রায়দুর্লভ খনন করেন। বেভারিজ ভ্রমরুমে

 ১৬ St. Hodge's Travels in India, p. 18.