পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/১৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
উধূয়ানালা
১৬৫

কিন্তু অবশেষে মীর কাসেমও ইংরেজ-কোপানলে দগ্ধ হইয়া বঙ্গরাজ্য হইতে পলায়ন করিতে বাধ্য হন।

 ইংরেজেরা আপনাদিগের বাণিজ্যের সুবিধার জন্য কলিকাতা কাউন্সিল হইতে এইরূপ এক নিয়ম জারি করেন যে, কাউন্সিলের অনুমতিপত্র লইয়া, যে-কোন ইংরেজ বিনা শুল্কে সমস্ত পণ্যদ্রব্যের আমদানি-রপ্তানি করিতে পারিবে। কিন্তু অন্যান্য লোকের বাণিজ্য-দ্রব্যের আমদানি-রপ্তানি করিতে হইলে, তাহাদিগকে অধিকপরিমাণে শুল্ক প্রদান করিতে হইবে। এইরূপ নিয়ম প্রচারিত হওয়ায়, যে-সমস্ত নৌকায় কেবল ব্রিটিশ নিশান ও ইংরেজ-সিপাহীর ন্যায় পরিচ্ছদধারী আরোহিগণ থাকিত, তাঁহারাই নবাবের কর্মচারীদিগের অনুসন্ধান হইতে নিষ্কৃতি পাইত। এই কারণে কেবল কোম্পানী নহে, কোম্পানীর কর্মচারিগণের মধ্যে যাঁহাদের গুপ্তব্যবসায় প্রচলিত ছিল, তাঁহারা পর্যন্ত যথেষ্ট অর্থ সঞ্চয় করিতে লাগিলেন। এই রূপ অবাধ বাণিজ্যে ক্রমে ক্রমে সমস্ত ব্যবসায় তাহাদিগের একচেটিয়া হইয়া উঠিল। দেশীয় ব্যবসায়িগণ ক্রমশঃ অর্থহীন হওয়ায়, তাহাদের ধ্বংসমুখে পতিত হইবার উপক্রম হইল; নবাবের রাজস্বেরও যথেষ্ট ক্ষতি হইতে লাগিল। সাধারণ বণিকগণ ব্রিটিশ-নিশান ও ইংরেজ-সিপাহীর পরিচ্ছদ ধারণ করিয়া, অবাধে বাণিজ্যকার্য চালাইতে লাগিল। যে-যে স্থানে নবাবের কর্মচারিগণ অনুমতিপত্রের অনুসন্ধানের জন্য চেষ্টা করিয়াছিল, তত্তৎস্থানে নিকটবর্তী ইংরেজকুঠির অধ্যক্ষ-কর্তৃক ধৃত হইয়া তাহাদিগকে যৎপরোনাস্তি লাঞ্ছনা ও অবমাননা ভোগ করিতে হইয়াছিল।

 এইরূপে রাজস্বের ক্ষতি হওয়ায়, মীর কাসেম কলিকাতা কাউন্সিলে বারংবার লিখিয়া পাঠাইলেন; কিন্তু কলিকাতা কাউন্সিল তাহাতে কর্ণপাত করিলেন না। গবর্নর ভান্সিটার্ট কাউন্সিলের সভ্যদিগকে এ বিষয়ে বিবেচনা করিতে বলিয়াছিলেন; কিন্তু তাঁহার অনুরোধও গ্রাহ্য হয় নাই। অবশেষে কাউন্সিলের সভ্যগণের পরামর্শানুসারে ভান্সিটার্ট নবাবের সহিত সাক্ষাৎ করিয়া, সমস্ত গোলযোগের মীমাংসার জন্য মুঙ্গের যাত্রা করেন। তথায় নবাবের সহিত তিনি এইরূপ বন্দোবস্ত করিয়া আসেন যে, যেখানে ইংরেজের শতকরা ৯ টাকা মাশুল দিবেন, দেশীয়দিগকে তথায় শতকরা ২৫ টাকা দিতে হইবে এবং ইংরেজদিগের অনুমতিপত্র ইংরেজ অধ্যক্ষগণের স্বাক্ষরিত হইয়া নবাবের রাজস্ব-কর্মচারিগণ কর্তৃকও পুনঃস্বাক্ষরিত হইবে। ভান্সিটার্ট মুঙ্গের হইতে কলিকাতায় আসিয়া কাউন্সিলে এই সমস্ত বিষয় বিবৃত করিলেন; কিন্তু সভ্যগণ তাহাতেও স্বীকৃত হইলেন না। তাঁহারা লবণের জন্য শতকরা ২॥৹ টাকা মাত্র মাশুল দিতে চাহিলেন এবং যেখানে তাঁহাদের লোকের সহিত নবাবের লোকের গোলযোগ হইবে, ইংরেজ অধ্যক্ষেরাই তাহার বিচার করিবেন বলিয়া প্রকাশ করিলেন।

 মীর কাসেম কাউন্সিলের এইরূপ মত শুনিয়া অত্যন্ত বিরক্ত ও ক্রুদ্ধ হইলেন। অতঃপর তিনি রাজ্যমধ্যে বিনাশুল্কে বাণিজ্য করিবার জন্য কি দেশীয়, কি বিদেশীয়