পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/২০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
মহারাজ নন্দকুমার
২০১

পরিত্যাগ করিয়াছিলেন। সেই সময়ে ভারতের চতুদিকে ঘোর রাজনৈতিক বিপ্লব উপস্থিত হইয়াছিল। কিন্তু বাঙ্গলারাজ্য তৎকালে কার্যদক্ষ নবাবগ্রণী মুশিদকুলীর তর্জনীতাড়নে স্থিরভাবে শাসিত হইতেছিল। মুশিদকুলীর রাজস্ববন্দোবস্ত বাঙ্গলার ইতিহাসের একটি সর্বপ্রধান ঘটনা। তাহার রাজস্বকার্যের জ্ঞান ও দক্ষতা তৎকালে


করিয়া বাঙ্গালী লেখকগণ নন্দকুমারকে একজন শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি বলিয়া অভিহিত করিয়া থাকেন, তাহা হইলে, তাঁহারা যে একটি গুরুতর অপরাধ করিয়াছেন, ইহা বোধ হয় কেহই বিবেচন৷ করিবেন না। তাহার পর ঘোষসাহেব বলিতেছেন যে, উক্ত লেখকগণের মতে নন্দকুমার যে কেবল ব্রাহ্মণসমাজের নেতা ছিলেন এমন নহে, কিন্তু বঙ্গদেশস্থ সমস্ত হিন্দু-জাতির অন্ততঃ সমস্ত বাঙ্গালী হিন্দুব নেতা ছিলেন। হিন্দুদিগের ভগ্ন যত্ন ও শক্তি তাঁহাতেই পুনমিলিত হইয়াছিল; অন্ততঃ তাঁহারই জন্য ধ্বংসমুখে পতিত মুসলমান শাসনকর্তৃগণের শক্তি সঞ্জীবিত হইতেছিল, এবং তিনি বৈদেশিকগণের হাত হইতে স্বদেশ রক্ষা করিয়া একটি মিলিত জাতি ও রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতৃরূপে দণ্ডায়মান হইয়াছিলেন। ইহাও বাঙ্গালী লেখকগণের কথা নহে। নন্দকুমার যে তাৎকালিক বঙ্গীয় হিন্দুগণের নেতা ছিলেন, তাহা নবকৃষ্ণের জীবনীলেখক ব্যতীত আর সকলেই স্বীকার কারবেন, এবং তিনি যে ব্রাহ্মণগণের মধ্যে অন্যতম নেতা ছিলেন, তাহাও প্রকৃত কথা। কলিকাতার ন্যায় নবপ্রতিষ্ঠিত নগরের নবসমাজে কর্তৃত্ব করিয়া যদি কেহ কেহ বঙ্গীয় হিন্দুগণের নেতৃস্বরূপে উত্থিত হইতে পারেন, তাহ হইলে, হিন্দু, বৌদ্ধ, পাঠান ও মোগল, পরিশেষে ইউরোপীয়গণের আধুষিত মুর্শিদাবাদে রাঢ়ীয়, বারেন্দ্র প্রভৃতি সন্তান্ত ব্রাহ্মণশ্রেণীর ও উত্তররাঢ়ীয় প্রভৃতি সন্ত্রান্ত কায়স্থগণেব দ্বারা উজ্জলীকৃত প্রাচীন সমাজে একাধিপত্য করিয়া মহারাজ নন্দকুমার যদি হিন্দু বা ব্রাহ্মণসমাজের নেতা না হন, তাহা হইলে এদেশের লোকের যে বিচারশক্তি একেবারে অন্তহিত হইয়াছে, ইহা ব্যতীত আর কি বলা যাইতে পারে? যিনি আপনার রাজনৈতিক প্রতিভারলে ক্রমে তাৎকালিক হিন্দুর পক্ষে সর্বশ্রেষ্ঠ পদ নবাব-নাজিমের দেওয়ানী পদে প্রতিষ্ঠিত হইয়া সমস্ত বঙ্গরাজ্যের রাজস্ব বন্দোবস্ত করিয়াছিলেন, তিনি যদি হিন্দুসমাজের নেতা না হন, তাহা হইলে আর কে হইতে পারে, তাহ। আমরা বলিতে পারি না। মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র বা মহারানী ভবানীর ন্যায় নন্দকুমার সামাজিক ভাবে সমস্ত ব্রাহ্মণসমাজের নেতা না হইলেও, তিনি যে মুশিদাবাদের ব্রাহ্মণসমাজের নেতা ছিলেন, ইহা সত্য কথা। তাহারই সম্মানের জন্য অদ্যাপি তাঁহার দৌহিত্রবংশীয়ের প্রাচীন সৈদাবাদ-সমাজের সমাজপতিরূপে পরিগণিত। ব্রাহ্মণসমাজের অন্যতম নেতা হওয়ায় ও রাজনৈতিক প্রতিভায় বাঙ্গালীগণের সর্বশ্রেষ্ঠ হইযা সর্বশ্রেষ্ঠ পদ লাভ করায় তিনি যে হিন্দুসমাজেরও নেতা হইয়াছিলেন, ইহা ঐতিহাসিক সত্য। সাহেবের তাহাকে ব্রাহ্মণসমাজের নেতা বলিয়াই জানিতেন। আমরা একজনের উক্তি উদ্ধৃত করিতেছি:—

 “The privileges of Brahmins are deemed, in every part of India inviolable. They commute capital punishment and are exempted, by what may be called the common law of the country, from every species of personal outrage. Nuncomer was at the head of this sacred cast, whom the Hindoos regard everywhere with idolatrous veneration.” (Transaction in India, p. 245.)