পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/২৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
মহারাজ নন্দকুমার
২৩৫


হেস্টিংসের বাটীতে গতায়াত করিত। এই মোহনপ্রসাদের সহিত তাঁহার জামাতা ও বর্তমান কুঞ্জঘাটা রাজবংশের আদি-পুরুষ জগৎচাঁদও যোগদান করিয়াছিলেন। নন্দকুমার দুঃখের সহিত বলিয়াছেন, যে জগৎচাঁদকে আমি পুত্রের ন্যায় বাটীতে প্রতিপালন করিয়াছি, আজ সেও আমার অনিষ্টসাধনে উদ্যত।৩০

 হেস্টিংস মহম্মদ রেজা খাঁ ও সেতারবরায়ের বিরুদ্ধে নন্দকুমারকে নিযুক্ত করিলে, নন্দকুমার তাঁহাদের বিরুদ্ধে এক এক তালিকা প্রস্তুত করিয়া দেন। মহম্মদ রেজা খাঁ নিজামতের রত্নখচিত অলঙ্কার, হস্তী ও অশ্ব ব্যতীত প্রায় বিশ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন। দুর্ভিক্ষের সময় চাউল একচেটিয়া করিয়া রাখিয়া, উচ্চদরে বিক্রয় করেন, ইত্যাদি অনেক কথার উল্লেখ করিয়াছিলেন। সেতাবরায়ের বিরুদ্ধেও ৯০ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করার এক তালিকা প্রস্তুত হয়। রেজা খাঁ ও সেতাবরায় উভয়েই এই বিপদ হইতে উদ্ধারের জন্য হেস্টিংস, নন্দকুমার ও অন্যান্য দুই একজনকে উৎকোচ দিতে প্রতিশ্ৰুত হন। নন্দকুমার সে কথা গবর্নরকে জানাইয়াছিলেন। রেজা খাঁ তাহাকে দুই লক্ষ ও হেস্টিংসকে দশ লক্ষ এবং সেতাবরায়ও তাহাকে এক লক্ষ, হেস্টিংসকে চারি লক্ষ ও রীড নামে কোম্পানীর আর একজন কর্মচারীকে ৫০ হাজার টাকা দিতে চাহিয়াছিলেন। ইহার পর তাঁহাদিগকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

 কাশীর রাজা বলবন্তসিংহ দুইটি পরগণা স্বরাজ্যভুক্ত করিয়া লন। তাঁহার নিকট হইতে ২৪ লক্ষ টাকা কোম্পানীর পাওনা হইয়াছিল। হেস্টিংস প্রথমে নন্দকুমারের জামাতা রাধাচরণকে বলবন্তের পুত্র চেৎসিংহের নিকট হইতে সে টাকা আদায়ের জন্য আদেশ দেন; পরে স্বয়ং কাশীতে উপস্থিত হইয়া চেৎসিংহের সহিত সাক্ষাতের পর কোম্পানীর পাওনা টাকা ছাড়িয়া দেন।

 বাহারবন্দ পরগণা বলপূর্বক রানী ভবানীর নিকট হইতে লইয়া কৃষ্ণকান্ত নন্দীর পুত্র লোকনাথকে দেওয়া হয়।

 দিল্লীর বাদশাহ নন্দকুমারকে রাজসম্মানের চিহ্নস্বরূপ একখানি ঝালরদার পাল্কী প্রদান করেন; পাটনার শাসনকর্তা তাহ আটক করিয়া রাখেন। হেস্টিংস সেখানি কলিকাতায় পাঠাইতে লিখিলে, তাহা কলিকাতায় উপস্থিত হয়। কিন্তু তিনি সেখানি নন্দকুমারকে না দিয়া তাহ নিজ ব্যবহারের জন্য গ্রহণ করেন।

 তাহার পর মণিবেগম ও গুরুদাস প্রভৃতির নিয়োগের জন্য নন্দকুমার যে সমস্ত টাকা আপনাদিগের কর্মচারী ও হেস্টিংসের কর্মচারী কান্তবাবুর ভ্রাতা নৃসিংহ প্রভৃতির দ্বারা প্রেরণ করেন, তাহারও একটি তালিকা দিয়াছিলেন। তাহাতে প্রথম দফায় ৭৪oo৪, দ্বিতীয় দফায় ২৫৯৯৮॥o, তৃতীয় দফায় ৩১০৩llo, চতুর্থ দফায় ১ooo,


___________________

 ৩০ জগৎচাঁদের কথা গুরুদাসের প্রতি নন্দকুমারের লিখিত একখানি পত্র হইতেও জানা যায়, পরিশিষ্টে পত্রখানি প্রকাশিত হইল।