পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
২০
মুর্শিদাবাদ-কাহিনী

 ভগ্ন মন্দিরের উপকরণ লইয়া কাটরা মসজেদ নির্মাণ সম্বন্ধে প্রচলিত ইতিহাসের মতে অনেকে সন্দিহান হইয়া থাকেন।[১] একেবারে মিথ্যা না হইলেও ইহার অধিকাংশ অতিরঞ্জিত বলিয়াই বোধ হয়। এইরূপ কথিত আছে যে, মোরাদকে এক বৎসরের মধ্যে মসজেদ নির্মাণের আদেশ দিলে, মোরাদ জাফর খাঁর নিকট হইতে অনুমতি লয় যে, তাহার কার্যে নবাব যেন কোনরূপ বাধা প্রদান না করেন। এক বৎসরের মধ্যে এই বৃহৎ মস্‌জেদ নির্মাণ করা যে কতদূর দুঃসাধ্য তাহা সহজে অনুমান করা যাইতে পারে। সুতরাং মোরাদ এক বৎসরের মধ্যে নূতন করিয়া ইষ্টকাদি প্রস্তুত করিয়া মস্‌জেদ নির্মাণ করিতে গেলে, কখনও কৃতকার্য হইতে পারিত না। এইজন্য নিকটবর্তী মন্দিরাদি ভগ্ন করিয়া থাকিবে। কেবল মন্দির বলিয়া কেন, নিকটবতী অন্যান্য ইষ্টকনিমিত গৃহাদিরও উক্তরূপ দশা হইয়াছিল বলিয়া জানা যায়। মুর্শিদকুলী খাঁ হিন্দুবিদ্বেষী বলিয়া ইতিহাসে পরিচিত; কিন্তু আমরা সেরূপ মনে করি না; তবে হিন্দু অপেক্ষা মুসলমানদিগের প্রতি তাঁহার আনুরক্তি কিছু অধিক ছিল। তিনি যে ইচ্ছাপূর্বক মন্দিরভঙ্গের আদেশ দিয়াছিলেন, ইহা বিশ্বাসযোগ্য নহে। কারণ, তিনি নিজে সমাধিমন্দিরনির্মাণপ্রথার কোনরূপ আদেশ প্রদান করেন নাই এবং এক বৎসরের মধ্যে উক্ত প্রকাণ্ড মসজেদ ও সমাধির নির্মাণ অসম্ভব বলিয়া সম্ভবতঃ তিনি বাধ্য হইয়া মোরাদের অত্যাচারের প্রতি লক্ষ্য করেন নাই। কিন্তু মোরাদ ফরাসের অত্যাচার অস্বীকার করিবার উপায় নাই। কারণ মুর্শিদকুলীর জামাতা,

  1. “তারিখ বাঙ্গালা” গ্রন্থে প্রথমে এই মন্দিরভঙ্গব্যাপারের কথা লিখিত হয়। গ্ল্যাডউইন সাহেবকৃত তাহার ইংরাজি অনুবাদ হইতে স্টুয়ার্ট প্রভৃতি মন্দিরভঙ্গের কথা উল্লেখ করিয়াছেন। রিয়াজুস্‌-সালাতীনের অধিকাংশ “তারিখ বাঙ্গালা” হইতে গৃহীত হইলেও তাহাতে মন্দিরভঙ্গের কথা নাই। মুর্শিদাবাদের নবাব বাহাদুরের দেওয়ান সুপ্রসিদ্ধ ফজ্‌ল রব্বী খাঁ বাহাদুর মন্দিরভঙ্গের কথায় বিশ্বাস স্থাপন করিতেন না। বেভারিজ সাহেব উক্ত বিবরণ অযৌক্তিক বলিয়া নির্দেশ করিয়াছেন। তিনি বলেন যে, প্রচলিত ইতিহাসে ৪ দিনের পথের সমস্ত হিন্দুমন্দির ভগ্ন হওয়ার কথা লিখিত আছে; অথচ মুর্শিদাবাদ হইতে ১॥o ক্রোশ দূরে কিরীটেশ্বরীর মন্দির সমভাবে অদ্যাপি বিরাজ করিতেছে। “The tale in its original form, is even more preposterous, for in Gladwin's translation of the Mahamadan narrative, and in Stewart, the prohibitory distance is given as four days” (Calcutta Review, October, 1892)। কিন্তু মুর্শিদাবাদের তৎকালিক সর্বশ্রেষ্ঠ হিন্দু তীর্থস্থান কীরিটেশ্বরীর সহিত বাঙ্গলার রাজস্ব-বিভাগের প্রধান কর্মচারী বঙ্গাধিকারী কাননগোগণের বিশিষ্টরূপ সম্বন্ধ থাকায় মোরাদের ন্যায় একজন নিম্নপদস্থ কর্মচারী তাহা ভাঙ্গিতে সাহস করে নাই, এরূপ অনুমানও করা যাইতে পারে। উক্ত মন্দিরভঙ্গের বিবরণ অতিরঞ্জিত হইলেও ‘তারিখ বাঙ্গালার’ লিখিত বিষয় যে একেবারে সম্পূর্ণ মিথ্যা, এ কথা সাহস করিয়া বলা যায় না।