বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/২৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
২৬০
মুর্শিদাবাদ-কাহিনী

জীবতাবস্থায় নন্দকুমারের একমাত্র বংশধর তাহার দৌহিদ জগচ্চন্দ্রের পুত্র রাজা মহানন্দ সমস্ত সম্পত্তি হস্তগত করেন। মহানন্দ নিজামতে দেওয়ানী করিতেন। তিনি রাজোপাধিতে ভূষিত হইয়াছিলেন। নবাব কুঞ্জঘাটার বাটতে উপস্থিত হইয়া তাহাকে খেলাং প্রদান করেন।

 পূর্বে বলা হইয়াছে যে, জগচ্চন্দ্রের প্রতি কোম্পানীর কর্মচারিগণ সন্তুষ্ট ছিলেন। এজন্য তদ্বংশীয়গণ কোম্পানীর কর্মচারিদের সহিত সৌহার্দসূত্রে আবদ্ধ হন। তাহার একটি প্রমাণ দেওয়া যাইতেছে। যৎকালে ইংলণ্ডের সুপ্রসিদ্ধ ওয়েস্টমিনিস্টার-হলে সমস্ত ব্রিটিশজাতির প্রতিনিধির নিকট ওয়ারেন হেস্টিংসের বিচার চলিতেছিল, সেই সময়ে হেস্টিংস নিজ দোষহীনতার প্রমাণের জন্য তাঁহার শাসনকে ন্যায়নুমোদিত বলিয়া প্রতিপন্ন করিবার ইচ্ছায় কতকগুলি দেশীয় সন্ত্রান্ত লোকের নামস্বাক্ষর সংগ্রহ করিয়াছিলেন। তন্মধ্যে রাজা মহানন্দের নামও দৃষ্ট হইয়া থাকে। মহানন্দও একজন পরমবৈষ্ণব ছিলেন; তাহার স্থাপিত রাধামোহন ও মহাপ্রভু গৌরাঙ্গমৃতি প্রভৃতি তাহার প্রমাণ। রাজা মহানন্দের পর তাহার পুত্র বিজয়কৃষ্ণ রাজোপাধি প্রাপ্ত হইয়াছিলেন; বিজয়কৃষ্ণের পর আর কেহই সে উপাধি লাভ করেন নাই। কুঞ্জঘাট রাজবাটতে নন্দকুমারের ভ্রাতা কেবলকৃষ্ণের রাও উপাধি, জগচ্চন্দ্রের রায় উপাধি ও গুরুদাসের রায়বাহাদুর উপাধির ও রাজা গুরুদাসের জমিদারীর সনন্দ আছে। বর্তমান সময়ের ন্যায় তৎকালে রায় ও রায়বাহাদুর উপাধি পথেঘাটে গড়াগড়ি যাইত না। সে সময়ে রায়দিগকে সহস্র সৈন্যের (তন্মধ্যে পঞ্চশত অশ্বারোহী) অধিপতির ও রায়বাহাদুরকে তিন সহস্র সৈনের (তন্মধ্যে দুই সহস্র অশ্বারোহী) অধিপতির পদমর্যাদা দেওয়া হইত। বিজয়কৃষ্ণের পর কৃষ্ণচন্দ্র, এবং তৎপরে কুমার দুর্গানাথ কুঞ্জঘাট রাজবংশের বংশধর হন। এক্ষণে দুর্গানাথের পুত্র কুমার দেবেন্দ্রনাথ মহারাজ নন্দকুমারের একমাত্র বংশধর বলিয়া পরিচয় প্রদান করতেছেন। দেবেন্দ্রনাথ তরুণবয়স্ক; কিন্তু তাহার স্থিরবুদ্ধি, অমায়িক ব্যবহার, সাধুপ্রকৃতি মহারাজ নন্দকুমারের বংশধরের ন্যায়ই প্রতীয়মান হয়। ভগবানের আশীর্বাদে তিনি দীর্ঘজীবন লাভ করিয়া, তাহার বংশের আদিপুরুষ সেই দেশবিখ্যাত প্রকাণ্ডপুরুষ মহারাজ নন্দকুমারের স্বধর্ম, স্বদেশ ও স্বজাতিভক্তির অনুকরণপূর্বক বঙ্গভূমির মুখোজ্জ্বল করুন।