পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/৩২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
৩১৪
মুর্শিদাবাদ-কাহিনী

উপস্থিত হন। এইরূপ পরিদর্শন করিয়া, তাঁহারা দেশের অবস্থা অনেক পরিমাণে জ্ঞাত হইলেন। তখন এইরূপ সিদ্ধান্ত হইল যে, জমিদারদিগকে প্রকাশ্য নীলামে উচ্চদরে পাঁচ বৎসরের জন্য জমির ইজারা দিলে, রাজস্ব আদায়ের সুবন্দোবস্ত হইতে পারে। তাঁহাদের সেই সিদ্ধাস্তানুসারে পাঁচসনা বন্দোবস্তের নিয়ম হয়। তাঁহারা জমিদারের হস্ত হইতে প্রজাদিগকে রক্ষা করিতেও ইচ্ছা করেন। যদিও হেস্টিংসসাহেব, প্রকাশ্যভাবে সাধারণের সমক্ষে প্রকাশ করিয়াছিলেন যে, প্রজাদিগের মঙ্গলের জন্য পাঁচসনা বন্দোবস্তের সৃষ্টি হইল, কিন্তু জমিদারের নিকট হইতে তিনি যেরূপ ভাবে উৎকোচ গ্রহণ করিয়াছিলেন, তাহতে প্রজাদিগের উপর পূর্বাপেক্ষ কত অধিক অত্যাচার হইয়াছিল, তাহা বুদ্ধিমানমাত্রেই উপলব্ধি করিতে পারেন। জমিদারগণ পূর্বে আপনাদের ক্ষুদ্র উদরপরিপূরণের জন্য প্রজাদিগের উপর যাহা কিছু অত্যাচার করিতেন, এক্ষণে গবর্নর ও তাঁহার অনুচরবর্গের বিশ্বগ্রাসী উদরপরিপূরণার্থ কিরূপ মাত্রায় অত্যাচার করিতে বাধ্য হইয়াছিলেন, তাহা সহজেই বুঝা যায়! যাহা হউক হেস্টিংস প্রকাশ্যভাবে পাঁচসনা বন্দোবস্তের সদুদ্দেশ্য প্রকাশ করিয়াছিলেন। এই পাঁচসনা বন্দোবস্তের কয়েক বৎসর পরে দশসালা, অবশেষে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত স্থিরীকৃত হয়। জমিদারগণ কিস্তি কিস্তি রাজস্ব প্রদান করিতে অনুমতি প্রাপ্ত হন।

 হেস্টিংসসাহেব এই সময়ে গ্রামের মহাজনদিগের প্রতিও সুদের হার কম করিবার নিয়ম জারি করিয়া, হতভাগ্য কৃষকদিগকে তাহাদের কঠোর হস্ত হইতে মুক্ত করিবার চেষ্টা করেন। কুসীদজীবী মহাজনদিগের প্রকৃতি যে কসাইদিগের অপেক্ষাও ভীষণ, তাহা বোধ হয় সকলেই একবাক্যে স্বীকার করিবেন। পূর্বে দেশীয় আমীনদিগের দ্বারা রাজস্ব সংগ্রহ হইত; এক্ষণে তাহাদের স্থলে অধিকাংশ জেলায় ইংরেজ কালেক্টর নিযুক্ত হইলেন এবং কতকগুলি জেল লইয়া এক একটি বিভাগের সৃষ্টি হইল; একজন কমিশনারের উপর তাহাদের তত্ত্বাবধানের ভার ন্যস্ত হইল। অদ্যাপি ঐরূপ নিয়ম প্রচলিত রহিয়াছে। পাটনা ও মুর্শিদাবাদ হইতে রাজস্ব-সমিতি কলিকাতায় আনীত হইল এবং উভয়ে এক হইয়া একটি মাত্র রাজস্ব-সমিতি গঠিত হইল। ঐ রাজস্ব-সমিতির সহিতই গঙ্গাগোবিন্দ সিংহের বিশেষ সম্বন্ধ; আমরা ক্রমে তাহা দেখাইতেছি।

 এইরূপে রাজস্বসম্বন্ধে বন্দোবস্ত করিয়া, হেস্টিংস বিচারকার্যের বন্দোবস্তেও মনোনিবেশ করিলেন। প্রত্যেক জেলায় এক একটি দেওয়ানী আদালত স্থাপন করিয়া তাহার বিচারভার কালেক্টরদিগের হস্তে দেওয়া হইল; সুতরাং ইহাতে রাজস্ব ও বিচারের ভার একজনের হস্তেই পড়ে। কলিকাতায় সদর দেওয়ানী আদালত স্থাপিত হইল এবং কাউন্সিলের সভ্য ও সভাপতি দ্বারা তাহার কার্য সম্পন্ন হইতে লাগিল। কতকগুলি দেশীয় কর্মচারী উক্ত বিষয়ে তাহাদিগের সাহায্যার্থ নিযুক্ত হইলেন। সদরদেওয়ানী আদালতে, মফঃস্বল-দেওয়ানী আদালতের ৫oo টাকার অধিক দাবীর আপীলের মীমাংসা হইত।