পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/৪০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাহারবন্দ

 বাহারবন্দ রঙ্গপুর জেলার একটি প্রসিদ্ধ পরগণা,কেবল রঙ্গপুর কেন, সমগ্র বঙ্গরাজ্যের এরূপ বিস্তৃত ও উর্বর পরগণ অতি অল্পই আছে বলিয়া বোধ হয়। ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ও বিস্রোতার সলিলসিক্ত হইয়া শ্যামল শস্যরাজিপরিপূর্ণ বাহার বহুকাল হইতে বঙ্গদেশে স্বীয় নাম ঘোষণা করিতেছে। মুসলমানরাজত্বের বহুপূর্ব হইতে ইহার নাম শুত হওয়া যায়। বাহারবন্দ বাঙ্গলাদেশে প্রবাদবাক্যের সহিত জড়িত। ইহার পুরাতত্ত্ব জানিতে হইলে, রঙ্গপুর প্রদেশের কিঞ্চিৎ বিবরণ জ্ঞাত হওয়া আবশ্যক; কারণ বাহারবন্দ রঙ্গপুরের অনেক অংশ অধিকার করিয়া আছে। রঙ্গপুর পূর্বে প্রাগজ্যোতিষ রাজ্যের অন্তর্ভুত ছিল; প্রাগজ্যোতিষ কামরূপের নামান্তর। প্রাগজ্যোতিষেশ্বর ভগদত্ত রঙ্গপুর স্থাপন করিয়াছিলেন বলিয়া প্রসিদ্ধ। ভগদত্ত কুরুক্ষেত্রের মহাসমরে দুর্যোধনের পক্ষ অবলম্বন করেন এবং অজুন-কর্তৃক নিহত হন। ভগদত্তের বংশীয়েরা অনেক দিন কামরূপে রাজত্ব করিয়াছিলেন। তাহাদের পর রঙ্গপুর প্রদেশে পৃথু নামে একজন পরাক্রান্ত রাজার উল্লেখ দেখিতে পাওয়া যায়। বোদা ও বৈকুণ্ঠপুরের মধ্যে তাহার রাজধানীর ভগ্নাবশেষ লক্ষিত হয়। তিনি কীচকগণ কর্তৃক আক্রান্ত হইয়া সরোবরসলিলে জীবন বিসর্জন দেন। পৃথুরাজের পর বৌদ্ধধর্মাবলম্বী সুপ্রসিদ্ধ পালবংশীয়গণের রাজত্বের কথা আমরা অবগত হই। দিনাজপুর প্রভৃতি স্থানে পালবংশীয়দিগের অশেষ কীতির চিহ্ন দেখিতে পাওয়া যায়। রঙ্গপুর ও কামরূপ পর্যন্ত তাহাদের রাজ্যের বিস্তার ছিল। সর্বপ্রথমে ধর্মপালের নাম শুত হওয়া যায়। ধর্মপালের পর গোপীচন্দ্র তাহার সিংহাসন অধিকার করেন। গোপীচন্দ্রের মাতা মীনাবতী ধর্মপালের সৈন্যদিগকে পরাস্ত করায় ধর্মপাল যে কোথায় অন্তহিত হন, তাহা কেহই জানিতে পারে নাই। গোপীচন্দ্র তৎপরে শূন্য সিংহাসনে আরোহণ করেন। বাহারবন্দের প্রধান স্থান উলিপুরের পূর্বে ওয়ারী নামক স্থানে গোপীচন্দ্রের ভবনের ধ্বংসাবশেষ দেখা যাইত। গোপীচন্দ্রের পর ভবচন্দ্র রাজা হন; ইনিই বাঙ্গলার প্রবাদকাহিনীতে হবচন্দ্র বলিয়া অভিহিত হইয়া থাকেন। ভবচন্দ্র ও তাহার মন্ত্রী গবচন্দ্রের বুদ্ধিমত্তার কাহিনী সমস্ত বাঙ্গলায় প্রচলিত; ভবচন্দ্র উক্ত গোপীচন্ত্রের পুত্র। ভবচন্দ্রের উত্তরাধিকারী হইতে পালবংশের অবসান হয়। তাহার পর কোচ প্রভৃতি জাতি-কর্তৃক রঙ্গপুর ও কামরূপ বারংবার আক্রান্ত হয়। পালবংশের পর অন্য একটি বংশের উল্লেখ আছে; সেই বংশে নীলজ, চক্রধাজ ও নীলার নামে রাজা জন্মগ্রহণ করেন। নীলাম্বর গৌড়ের বাদশাহ হোসেন শার সময় মুসলমান-কর্তৃক পরাজিত হন। মুসলমানদিগের হস্ত হইতে কামরূপ ও রঙ্গপুরু প্রদেশ কোচগণকর্তৃক অধিকৃত হয়। কোচবংশের স্থাপয়িতা হাজার হীরা ও জীরা নামে দুই কন্যা ছিল; হীরার গর্ভে বিশু ও জীরার গর্ভে শিশুর জন্ম হয়। বিশ্ব কোচবিহার রাজবংশের এবং শিশু জলপাইগুড়ি রাজবংশের আদিপুরুষ। বিশ্ব স্বীয়