পাতা:মৃণালিনী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
উপনয়—বহ্নিব্যাপ্য ধূমবান্।
১০৯

“যমুনা সলিলে সই, অব তনু ডারব,
আন সখি ভখিব গরল॥”

 হেমচন্দ্র গিরিজায়ার সম্মুখে উপস্থিত হইলেন। ব্যস্তস্বরে কহিলেন,

 “গিরিজায়ে! একি, গিরিজায়ে! তুমি এখানে? তুমি এখানে কেন? তুমি এদেশে কবে আসিলে?”

 গিরিজায়া কহিল “আমি এখানে অনেক দিন আসিয়াছি।” এই বলিয়া আবার গায়িতে লাগিল।

“কিবা কাননবল্লরী, গল বেঢ়ি বাঁধই,
নবীন তমালে দিব ফাস।”

 হেমচন্দ্র কহিলেন, “তুমি এদেশে কেন এলে?”

 গিরিজায়া কহিল, “ভিক্ষা আমার উপজীবিকা। রাজধানীতে অধিক ভিক্ষা পাইব বলিয়া আসিয়াছি।

“কি বা কানন বল্লরী, গল বেঢ়ি বাঁধই,
নবীন তমালে দিব ফাস।”

 হেমচন্দ্র গীতে কর্ণপাত না করিয়া কহিলেন, “মৃণালিনী কেমন আছে, দেখিয়া আসিয়াছ?”

 গিরিজায়া গায়িতে লাগিল।

“নহে—শ্যাম শ্যাম শ্যাম শ্যাম, শ্যাম নাম জপয়ি’
ছার তনু করব বিনাশ।”

 হেমচন্দ্র কহিলেন, “তোমার গীত রাখ। আমার কথার উত্তর দাও। মৃণালিনী কেমন আছে, দেখিয়া আসিয়াছ?”

 গিরিজায়া কহিল, “মৃণালিনীকে আমি দেখিয়া আসি ঞনাই। এ গীত আপনার ভাল না লাগে অন্য গীত গায়িতেছি।

এজনমের সঙ্গে কি সই, জনমের সাধ ফুরাইবে।
কিবা জন্মান্তরে, এ সাধ মোর পুরাইবে॥”