পাতা:মৃণালিনী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আর একটি সম্বাদ।
১১৩

 মা। “বৎস! সে সকল পরিচয় যুদ্ধান্তে দিব।”

 হেমচন্দ্র ভ্রূকুটী করিয়া কহিলেন, “স্বরূপ বৃত্তান্ত আমাকে জানাইলে, আমি যে মর্ম্মপীড়ায় কাতর হইব সে আশঙ্কা করিবেন না। আমিও কিয়দংশ শ্রবণ করিয়াছি। যাহা অবগত আছেন, তাহা নিঃসঙ্কোচে আমার নিকট প্রকাশ করুন।”

 মাধবাচার্য্য গৌড়নগরে গমন করিলে হৃষীকেশ তাঁহাকে আপন জ্ঞানমত মৃণালিনীর বৃত্তান্ত জ্ঞাত করিয়াছিলেন। তাহাই প্রকৃত বৃত্তান্ত বলিয়া মাধবাচার্য্যেরও বোধ হইয়াছিল; মাধবাচার্য্য কস্মিন‍্কালে স্ত্রীজাতির অনুরাগী নহেন—সুতরাং স্ত্রীচরিত্র বুঝিতেন না। এক্ষণে হেমচন্দ্রের কথা শুনিয়া তাঁহার বোধ হইল, যে, হেমচন্দ্র সেই বৃত্তান্তই কতক কতক শ্রবণ করিয়া মৃণালিনীর কামনা পরিত্যাগ করিয়াছেন—অতএব কোন নূতন মনঃপীড়ার সম্ভাবনা নাই বুঝিয়া, পুনর্ব্বার আসনগ্রহণপূর্ব্বক হৃষীকেশের কথিত বিবরণ হেমচন্দ্রকে শুনাইতে লাগিলেন।

 হেমচন্দ্র অধোমুখে করতলোপরি ভ্রূকুটী-কুটিল-ললাট সংস্থাপিত করিয়া নিঃশব্দে সমুদায় বৃত্তান্ত শ্রবণ করিলেন। মাধবাচার্য্যের কথা সমাপ্ত হইলেও বাঙ‍্নিষ্পত্তি করিলেন না। সেই অবস্থাতেই রহিলেন, মাধবাচার্য্য ডাকিলেন “হেমচন্দ্র!” কোন উত্তর পাইলেন না। পুনরপি ডাকিলেন “হেমচন্দ্র!” তথাপি নিরুত্তর।

 তখন মাধবাচার্য্য গাত্রোথান করিয়া হেমচন্দ্রের হস্ত ধারণ করিলেন; অতি কোমল, স্নেহময় স্বরে কহিলেন, “বৎস। তাত! মুখোত্তোলন কর, আমার সঙ্গে কথা কও!”

 হেমচন্দ্র মুখোত্তোলন করিলেন। মুখ দেখিয়া মাধবাচার্য্যও ভীত হইলেন। মাধবাচার্য্য কহিলেন, “আমার সহিত আলাপ কর। ক্রোধ হইয়া থাকে তাহা ব্যক্ত কর।”

ঞ৩