পাতা:মৃণালিনী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১২৬
মৃণালিনী।

 গিরিজায়া চমৎকৃতা হইয়া নিরুত্তরে হেমচন্দ্রের মুখপানে চাহিয়া রহিল।

 হেমচন্দ্র পথপার্শ্বস্থ এক ক্ষুদ্র বৃক্ষের শাখা ভগ্ন করিয়া হস্তে লইয়া কহিলেন, “দূর হও, নচেৎ বেত্রাঘাত করিব।”

 গিরিজায়া ভীতা হইয়া পলায়ন করিল। তাহার একটি গীত মনে আসিল, কিন্তু গায়িতে পারিল না।

 গিরিজায়া প্রত্যাগতা হইয়া হেমচন্দ্রের আচরণ মৃণালিনীর নিকট সবিশেষ বিবরিত করিল। এবার কিছু লুকাইল না। মৃণালিনী শুনিয়া কোন উত্তর করিলেন না। রোদনও করিলেন না। যেরূপ অবস্থায় শ্রবণ করিতেছিলেন, সেইরূপ অবস্থাতেই রহিলেন। দেখিয়া গিরিজায়া শঙ্কান্বিতা হইল—তখন মৃণালিনীর কথোপকথনের সময় নহে বুঝিয়া তথা হইতে সরিয়া গেল।

 গিরিজায় অগত্যা রত্নময়ীর নিকট গেল। কহিল “সই!”

 রত্ন। “কেন সই?”

 গিরি। “আমার বড় একটি দুঃখ হইয়াছে।”

 রত্ন। “কেন সই—তুমি সকল রসের রসমই—তোমার আবার দুঃখ কি সই।”

 গিরি। “দুঃখ এই সই—বৈকাল অবধি আমার গীত গায়িবার বড় ইচ্ছা হইয়াছে—গান থামে না—কিন্তু গান গায়িতে পারিতেছি না।”

 রত্ন। “কেন একি অলক্ষণ; কাঁকুড় গিলিতে গলায় বেঁধেছে না কি? নইলে তোমার গলা বন্ধ? নূন খেয়েছ বা।”

 গিরি। “তা না সই—মৃণালিনী কঁদিতেছে—পাছে আমি গীত গায়িলে রাগ করে?”

 রত্ন। “কেন, মৃণালিনী কঁদিতেছে কেন?”