পাতা:মৃণালিনী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১২৮
মৃণালিনী।

করিতে পারিতেছে না। ক্রমে তাহার স্বর স্পষ্টতালাভ করিতে লাগিল—ক্রমে ক্রমে উচ্চতর হইতে লাগিল, শেষে সেই সর্ব্বাঙ্গ সম্পূর্ণ তানলয়বিশিষ্ট কমনীয় কণ্ঠধ্বনি, পুষ্করিণী, উপবন, আকাশ প্লাবিত করিয়া, স্বর্গচ্যুত স্বরসরিত্তরঙ্গ স্বরূপ মৃণালিনীর কর্ণে প্রবেশ করিতে লাগিল। গিরিজায়া গায়িল।

পরাণ না গেলো।
যো দিন দেখনু সই যমুনা কি তীরে,
গায়ত নাচত সুন্দর ধীরে ধীরে,
ওঁহি পর পিয় সই, কাহে বারি তীরে,
জীবন না গেলো?
ফিরে ঘর আয়নু, না কহনু বোলি,
তিতায়নু আঁখিনীরে আপনা আঁচোলি,
যব কাঁদনু লাগি সই, কাহে না পরাণি,
তই ক্ষণ না গেলো?
শুননু শ্রবণ পথে মধুর বাজে,
রাধে রাধে রাধে রাধে বিপিন মাঝে,
যব শুননু লাগি সই, সো মধুর বোলি,
জীবন না গেলো?
ধায়নু পিয়সই, সোহি উপকূলে,
লুটায় কাঁদি সই শ্যাম পদ মূলে,
সোহি পদ মূলে রই, কাহেলো হামারি,
মরণ না ভেল?

 গিরিজায়া গায়িতে গায়িতে দেখিলেন, তাঁহার সম্মুখে চন্দ্রের কিরণোপরে মনুষ্যের ছায়া পড়িয়াছে। ফিরিয়া দেখিলেন, মৃণালিনী দাঁড়াইয়া আছেন। তাঁহার মুখ প্রতি চাহিয়া দেখিলেন, মৃণালিনী কাঁদিতেছেন।