পাতা:মৃণালিনী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
গজহন্তা।
১১

 কুত। “আমার আজ্ঞায় তোমার প্রাণদণ্ড হইবে। আমি যবন সম্রাটের প্রতিনিধি।”

 যুবা। “আপনি যবন দস্যুর ক্রীত দাস।”[১]

 কুতবউদ্দীন ক্রোধে কম্পিত হইলেন। কিন্তু নিঃসহায় যুবকের সাহস দেখিয়াও বিস্মিত হইলেন। কুতবউদ্দীন রক্ষিবর্গকে অজ্ঞা করিলেন, “ইহাকে বন্ধন করিয়া বধ কর।”

 বখ্‌তিয়ার খিলিজি, ইঙ্গিতে তাহাদিগকে নিষেধ করিলেন। পরে কুতবকে বিনয় করিয়া কহিলেন, “প্রভো! এই হিন্দু বাতুল। নচেৎ অনর্থক কেন মৃত্যু কামনা করিবে? ইহাকে বধ করায় অপৌরুষ।”

 যুবা বখ্‌তিয়ারের মনের ভাব বুঝিয়া হাসিলেন। বলিলেন,

 “খিলিজি সাহাব! বুঝিলাম আপনি অকৃতজ্ঞ নহেন। আমি হস্তিচরণ হইতে আপনাকে রক্ষা করিয়াছি বলিয়া আপনি আমার প্রাণরক্ষার জন্য যত্ন করিতেছেন। কিন্তু নিবৃত্ত হউন। আমি আপনার মঙ্গলাকাঙ্ক্ষায় হস্তী বধ করি নাই। আপনাকে একদিন স্বহস্তে বধ করিব বলিয়া আপনাকে হস্তীর চরণ হইতে রক্ষা করিয়াছি।”

 রাজপ্রতিনিধি এবং সেনাপতি উভয়ে উভয়ের মুখাবলোকন করিলেন। খিলিজি কহিলেন,

 “তুমি নিশ্চিত বাতুল। আপনি প্রাণ হারাইতে বসিয়াছ, অন্যে রক্ষা করিতে গেলে, তাহারও প্রতিবন্ধক হইতেছ। ভাল আমাকে স্বহস্তে বধ করিবার এত সাধ কেন?”

 যুবা। “কেন? তুমি আমার পিতৃরাজ্যাপহরণ করিয়াছ। আমি মগধরাজপুত্র। যুদ্ধকালে হেমচন্দ্র মগধে থাকিলে তাহা


  1. কুতবউদ্দীন আদৌ ক্রীতদাস ছিলেন।