পাতা:মৃণালিনী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যবনবিপ্লব।
১৬১

যজ্ঞোপবীত অশ্বের গলদেশে দুলিতে লাগিল। সিংহাসনস্থ শালগ্রামশিলা সকল যবন পুরীষে আবরিত হইল।

 ভয়ানক শব্দে নৈশাকাশ পরিপূর্ণ হইতে লাগিল। অশ্বের পদধ্বনি, সৈনিকের কোলাহল, হস্তীর বৃংহিত, যবনের জয় শব্দ; তদুপরি পীড়িতের আর্ত্তনাদ। মাতার রোদন, শিশুর রোদন, বৃদ্ধের করুণাকাঙ্ক্ষা, যুবতীর কণ্ঠ বিদার।

 যে বীরপুরুষকে মাধবাচার্য্য এত যত্নে যবনদমনার্থ নবদ্বীপে লইয়া আসিয়াছিলেন, এ সময়ে তিনি কোথা? এই ভয়ানকযবনপ্রলয়কালে, হেমচন্দ্র রণোন্মুখ নহেন। একাকী রণোন্মুখ হইয়া কি করিবেন?

 হেমচন্দ্র তখন আপন গৃহে শয়ন মন্দিরে, শয্যাপরে শয়ন করিয়াছিলেন। নগরাক্রমণের কোলাহল তাঁহার কর্ণে প্রবেশ করিল। তিনি দিগ্বিজয়কে জিজ্ঞাসা করিলেন, “কিসের শব্দ?”

 দিগ্বিজয় কহিল, “যবন সেনা নগর আক্রমণ করিয়াছে।” হেমচন্দ্র চমৎকৃত হইলেন। তিনি এ পর্য্যন্ত বখ্‌তিয়ার কর্ত্তৃক রাজপুরাধিকার এবং রাজার পলায়নের বৃত্তান্ত শুনেন নাই। দিগ্বিজয় তদ্বিশেষ হেমচন্দ্রকে শুনাইলেন।

 হেমচন্দ্র কহিলেন, “বাঙ্গালিরা কি করিতেছে?”

 দি। “যে পারিতেছে পলায়ন করিতেছে, যে না পারিতেছে সে প্রাণ হারাইতেছে।”

 হে। “আর বঙ্গীয় সেনা?”

 দি। “কাহার জন্য যুদ্ধ করিবে? রাজা ত পলাতক। সুতরাং তাহারা আপন আপন পথ দেখিতেছে।”

 হে। “আমার অশ্বসজ্জা কর।” দিগ্বিজয় বিস্মিত হইল, জিজ্ঞাসা করিল, “কোথায় যাইবেন?”

 হে। “নগরে।”

ঢ৩