পাতা:মৃণালিনী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যবনবিপ্লব।
১৬৩

আর্ত্তনাদ শ্রবণ করিলেন। যবন কর্ত্তৃক আক্রান্ত ব্যক্তির আর্ত্তনাদ বিবেচনা করিয়া হেমচন্দ্র গৃহমধ্যে প্রবেশ করিলেন।

 দেখিলেন গৃহমধ্যে যবন নাই। কিন্তু গৃহমধ্যে যবনদৌরাত্ম্যের চিহু সকল বিদ্যমান রহিয়াছে। দ্রব্যাদি প্রায় কিছুই নাই যাহা আছে তাহার ভগ্নাবস্থা, আর এক ব্রাহ্মণ আহত অবস্থায় ভূমে পড়িয়া আর্ত্তনাদ করিতেছে। সে এ প্রকার গুরুতর আঘাত প্রাপ্ত হইয়াছে যে মৃত্যু আসন্ন। হেমচন্দ্রকে দেখিয়া সে যবন ভ্রমে কহিতে লাগিল,

 “আইস—প্রহার কর—শীঘ্র মরিব—মার—আমার মাথা লইয়া সেই রাক্ষসীকে দিও—আঃ—প্রাণ যায়—জল! জল! কে জল দিবে।”

 হেমচন্দ্র কহিলেন “তোমার গৃহে জল আছে?”

 ব্রাহ্মণ কাতরোক্তিতে কহিতে লাগিল—“জানি না—মনে হয় না—জল! জল! পিশাচি!—সেই পিশাচীর জন্য প্রাণ গেল।”

 হেমচন্দ্র কুটীর মধ্যে অন্বেষণ করিয়া দেখিলেন, এক কলসে জল আছে। পাত্রাভাবে পত্রপুটে তাহাকে জল দান করিলেন। ব্রাহ্মণ কহিল “না!—না! জল খাইব না! যবনের জল খাইব না।” হেমচন্দ্র কহিলেন, “আমি যবন নহি, আমি আর্য্যবর্ণ—আমার স্পৃষ্ট জল পান করিতে পার। আমার কথায় বুঝিতে পারিতেছ না।”

 ব্রাহ্মণ জলপান করিল। হেমচন্দ্র কহিলেন, “তোমার আর কি উপকার করিব?”

 ব্রাহ্মণ কহিল, “আর কি করিবে? আর কি? আমি মরি। মরি! যে মরে তাহার কি করিবে?”