পাতা:মৃণালিনী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৭০
মৃণালিনী।

রাত্রিদিন মানসিক যন্ত্রণা ভোগ করিয়াছিলেন সুতরাং নিদ্রা ব্যতীত আর শরীর বহে না—তাঁহারও তন্দ্রা আসিল। নিদ্রায় তিনি স্বপ্ন দেখিতে লাগিলেন। দেখিলেন যেন হেমচন্দ্র একাকী সর্ব্বসমরবিজয়ী হইয়াছেন। মৃণালিনী যেন বিজয়ী বীরকে দেখিতে রাজপথে দাঁড়াইয়াছিলেন। রাজপথে, হেমচন্দ্রের অগ্রে, পশ্চাতে, কত হস্তী, অশ্ব, রথাদিযাইতেছে। মৃণালিনীকে যেন সেই সেনাতরঙ্গ ফেলিয়া দিয়া চরণদলিত করিয়া চলিয়া গেল—তখন হেমচন্দ্র নিজ সৈন্ধবী তুরঙ্গী হইতে অবতরণ করিয়া তাঁহাকে হস্ত ধরিয়া উঠাইলেন। তিনি যেন হেমচন্দ্রকে বলিলেন “প্রভো! অনেক যন্ত্রণা পাইয়াছি; দাসীকে আর ত্যাগ করিও না।” হেমচন্দ্র যেন বলিলেন, “আর কখন তোমায় ত্যাগ করিব না।” সেই কণ্ঠস্বরে যেন⸻

 তাঁহার নিদ্রাভঙ্গ হইল, “আর কখন তোমায় ত্যাগ করিব না।” জাগ্রতেও এই কথাও শুনিলেন। চক্ষু উন্মীলন করিলেন—কি দেখিলেন? যাহা দেখিলেন তাহা বিশ্বাস হইল না। আবার দেখিলেন—সত্য! হেমচন্দ্র সন্মুখে!—হেমচন্দ্র বলিতেছেন—“আর একবার ক্ষমা কর—আর কখন তোমায় ত্যাগ করিব না।

 নিরভিমানিনী, নিলর্জ্জা মৃণালিনী আবার তাঁহার কণ্ঠলগ্না হইয়া স্কন্ধে মস্তক রক্ষা করিলেন।