পাতা:মৃণালিনী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৪
মৃণালিনী।

গোপনে প্রণয় করিতে?”

 মৃ। “অসুখ কেন সখি—তিনিই আমার স্বামী। তিনি ভিন্ন অন্য কেহ কখন আমার স্বামী হইবে না।”

 ম। “কিন্তু এ পর্য্যন্ত ত তিনি স্বামী হয়েন নাই। সুতরাং সাধ্বীর তাহা অকর্ত্তব্য। রাগ করিও না সখি! তোমাকে ভগিনীর ন্যায় ভাল বাসি; এই জন্য বলিতেছি। তোমার চরিত্রে এমন কলঙ্ক—ইহা যখনই মনে পড়ে তখনই আমার শরীরে জ্বর আইসে।”

 মৃণালিনী অধোবদনে রহিলেন। ক্ষণেক পরে, চক্ষের জল মুছিলেন। কহিলেন, “মণিমালিনি! এ বিদেশে আমার আত্মীয় কেহ নাই। আমাকে ভালকথা বলে এমত কেহ নাই। যাহারা আমাকে ভালবাসিত তাহাদিগের সহিত যে আর কখন সাক্ষাৎ হইবে সে ভরসাও করি না। কেবলমাত্র তুমি আমার সখী—তুমি আমাকে ভাল না বাসিলে কে আর ভাল বাসিবে?”

 ম। “আমি তোমাকে ভাল বাসিব, ও বাসিয়াও থাকি, কিন্তু যখন ঐ কথাটী মনে পড়ে, তখন মনে করি তোমার সঙ্গে আমার দেখা না হওয়াই ভাল ছিল।”

 মৃণালিনী পুনশ্চ নীরবে রোদন করিলেন। কহিলেন, “সখি, তোমার মুখে এ কথা আমার সহ্য হয় না। যদি তুমি আমার নিকট শপথ কর, যে যাহা বলিব তাহা এ সংসারে কাহারও নিকটে ব্যক্ত করিবে না, তবে তোমার নিকট সকল কথা প্রকাশ করিয়া বলিতে পারি। তাহা হইলে তুমি আমাকে ভাল বাসিবে।”

 ম। “আমি শপথ করিতেছি।”

 মৃ। “তোমার চুলে দেবতার প্রসাদিত ফুল আছে। তাই স্পর্শ করিয়া শপথ কর।”