পাতা:মৃণালিনী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ভিখারিণী।
২৯

“বিকচনলিনে, যমুনা পুলিনে,
বহুত পিয়াসা—রে।
চন্দ্রমাশালিনী, যা মধুযামিনী,
না মিটল আশা—রে॥
সা নিশা সমরি—”

 এমন সময়ে মণিমালিনী উহাকে ডাকিয়া বাড়ীর ভিতর আনিলেন।

 সে অন্তঃপুরে আসিয়া পূর্ব্ববৎ গাইতে লাগিল।

“সা নিশা সমরি, কহলো সুন্দরি,
কাঁহা মিলে দেখা—রে।
শুনি যাওয়ে চলি, বাজয়ি মুরলী,
বনে বনে একা—রে।”

 মৃণালিনী তাহাকে কহিলেন, “তোমার দিব্য স্বর, তুমি গীতটী আবার গাও।”

 গায়িকার বয়স ষোড়শ বৎসর। ষোড়শী, খর্ব্বাকৃতা এবং কৃষ্ণাঙ্গী। গিরিজায়া প্রকৃত কৃষ্ণবর্ণা। তাই বলিয়া তাহার গায়ে ভ্রমর বসিলে যে দেখা যাইত না, অথবা কালি মাখিলে জল মাখিয়াছে বোধ হইত কিম্বা জল মাখিলে কালি বোধ হইত যেরূপ কৃষ্ণবর্ণ আপনার ঘরে থাকিলে উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ বলি, পরের ঘরে হইলে পাতুরে কালো বলি, ইহার সেইরূপ কৃষ্ণবর্ণ। কিন্তু বর্ণ যেমন হউক না কেন, ভিখারিণী কুরূপা নহে। তাহার অঙ্গ পরিষ্কার, সুমার্জ্জিত, চাকচিক্যবিশিষ্ট; মুখখানি প্রফুল্ল, চক্ষু দুটী বড়, অত্যন্ত শ্বেত, চঞ্চল, হাস্যময়; লোচনতারা নিবিড় কৃষ্ণ, এক টী তারার পার্শ্বে একটী তিল। ওষ্ঠাধর ক্ষুদ্র, রক্তপ্রভ, তদন্তরে অতি পরিষ্কার, অমলশ্বেত, কুন্দকলিকা-সন্নিভ দুই শ্রেণী দন্ত। কেশগুলিন সূক্ষ্ম,

গ৩