পাতা:মৃণালিনী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
নৌকা-যানে।
৬৩

 মৃ। “যেখানে যাইতেছি।”

 গি। “সে ত সুখের যাত্রা! তবে অন্যমন কেন? যাহাকে দেখিতে ভাল বাপি তাহাকে দেখিতে যাইতেছি ইহার অপেক্ষা সুখ আর কি আছে?”

 মৃ। “নবদ্বীপে আমার সহিত হেমচন্দ্রের সাক্ষাৎ হইবে না।”

 গি। “কেন? তিনি কি সেখানে নাই?”

 মৃ। “সেইখানেই আছেন। কিন্ত তুমি ত জান যে আমার সহিত এক বৎসর অসাক্ষাৎ তাঁহার ব্রত। আমি কি সে ব্রত ভঙ্গ করাইব?”

 গিরিজায়া নীরব হইয়া রহিল। মৃণীলিনী আবার কহিলেন, “আর কি বলিয়াই বা তাঁহার নিকট দাঁড়াইব? আমি কি বলিব যে হৃশীকেশের উপর রাগ করিয়া আসিয়াছি না বলিব যে হৃষীকেশ আমাকে কুলটা বলিয়া বিদায় করিয়া দিয়াছেন?”

 গিরিজায়া ক্ষণেক নীরব থাকিয়া কহিল, “তবে কি নবদ্বীপে তোমার সঙ্গে হেমচন্দ্রের সাক্ষাৎ হইবে না?”

 মৃ। “না।”

 গি। “তবে যাইতেছ কেন?”

 মৃ। “তিনি আমাকে দেখিতে পাইবেন না কিন্তু আমি তাঁহাকে দেখিব। তাঁহাকে দেখিতেই যাইতেছি।” গিরিজায়ার মুখে হাসি ধরিল না। বলিল “তবে আমি গীত গাই।”

চরণ তলে দিনু হে শ্যাঁম পরাণ রতন।
দিবনা তোমারে নাথ মিছার যৌবন॥
এ রতন সমতুল, ইহা তুমি দিবে মূল,
দিবানিশি মোরে নাথ দিবে দরশন॥[১]


চ২
  1. রাগিণী মল্লার—তাল কাওয়ালি।