এবার ভাসুর জবাব দিলেন। কেষ্টকে সুমুখে টানিয়া আনিয়া তাহার কোঁচার খুঁট খুলিয়া একটা কলাপাতার ঠোঙা বাহির করিয়া সক্রোধে বলিয়া উঠিলেন, হিংসুক আমরা। কেন যে ওকে ভাল চোখে দেখতে পারি নে, তা তুমি নিজের চোখে দ্যাখো। মেজবৌমা, তোমার শেখানোর গুণেই ও আমার টাকা চুরি ক’রে তোমার ভালোর জন্যে কোন একটা ঠাকুরের পূজা দিয়ে প্রসাদ এনেচে—এই নাও; বলিয়া তিনি গোটা-দুই সন্দেশ ও ফুল-পাতা ঠোঙার ভিতর হইতে বাহির করিয়া দেখাইলেন।
কাদম্বিনী চোখ কপালে তুলিয়া বলিলেন, মা গো! কি মিটমিটে শয়তান, কি ধড়িবাজ ছেলে। বেশ ত মেজবৌ, এখন তুমিই বল না, কি মতলবে ও চুরি করেচে? ও কি আমার ভালোর জন্যে?
হেমাঙ্গিনী ক্রোধে জ্ঞান হারাইলেন। একে তাঁহার অসুস্থ শরীর, তাহাতে এই সমস্ত মিথ্যা অভিযোগ, তিনি দ্রুতপদে কেষ্টর সম্মুখীন হইয়া তাহার দুই গালে সশব্দে চড় কষাইয়া দিয়া কহিলেন, বদমাইস চোর, আমি তোকে চুরি করতে শিখিয়ে দিয়েছি? কতদিন তোকে আমার বাড়ি ঢুকতে বারণ করেচি, কতবার তোকে তাড়িয়ে দিয়েচি! আমার নিশ্চয় বোধ হচ্চে, তুই চুরির মতলবেই যখন—তখন উঁকি মেরে দেখতিস।
ইতিপূর্ব্বেই বাড়ির সকলে আসিয়া উপস্থিত হইয়াছিল। শিবু কহিল, আমি নিজের চোখে দেখেছি মা, পরশু রাত্তিরে ও তোমার ঘরের সুমুখে আঁধারে দাঁড়িয়েছিল, আমাকে দেখেই ছুটে পালিয়ে গেল। আমি এসে না পড়লে নিশ্চয় তোমার ঘরে ঢুকে চুরি করত।
পাঁচুগোপাল বলিল, জানে মেজখুড়ীমার অসুখ শরীর-সন্ধ্যা হলেই ঘুমিয়ে পড়েন-ও কি কম চালাক!
মেজবৌয়ের কেষ্টর প্রতি আজকাল ব্যবহারে কাদম্বিনী যেরূপ প্রসন্ন হইলেন, এই ষোল বৎসরের মধ্যে কখনও এরূপ হন নাই। অত্যন্ত খুশী হইয়া কহিলেন, ভিজে বেড়াল। কেমন করে জানিব মেজবৌ, তুমি ওকে বাড়ি ঢুকতেও বারণ করেচ। ও বলে বেড়ায়,
৩৬