পাতা:মৈমনসিংহ গীতিকা (প্রথম খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/২০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৫০
মৈমনসিংহ-গীতিকা

এন[১] কালেতে প্রদীপকুমার কোন কাম করে।
ধীরে ধীরে গেল কুমার কন্যার মন্দিরে॥
পালঙ্কে বসিয়া কন্যা চিন্তে মায়ের কথা।
এমন সময় কুমার গিয়া উপচিল[২] তথা॥
“আজি কালি করি কন্যা কত বা ভারাও।
পরিচয়-কথা কও মোর মাথা খাও॥
দেখিয়া তোমার রূপ হইয়াছি পাগল।
দিবানিশি দেখি কন্যা তোমার চক্ষের জল।
মুছিলে না মুছে আঁখি কান্দ কোন দুঃখে।
বিয়া কইরা কন্যা মোরে থাক মনের সুখে॥
যে দিন হইতে দেখছি তোমায় মইষালের ঘরে।
জীবন-যৌবন সইপ্যা দিছি কন্যা তোমার করে॥
কোড়া শীকারে আর নাহি যাই আমি।
তোমার লাগিয়া উদাসী হইলাম আমি॥
বাগ-বাগীচা ফুলের শোভা চক্ষে নাহি লাগে।
পাগল হইয়াছি কন্যা তোমার অনুরাগে॥
তুমি আমার চন্দ্রসূর্য্য তুমি নয়নতার।
তুমি আমার মণিমুক্তা তুমি গলার হার॥
তিলেক ছাড়িয়া তোমায় নাহি বাচে প্রাণ।
তোমায় না পাইলে কন্যা ত্যজিব পরাণ॥
তুমি যদি ছাড় কন্যা আমি না ছাড়িব।
পায়ের গুঞ্জরী[৩] হইয়া পায়েতে থাকিব॥”
দ্বিজ ঈশান ভনে এই মদনের বান।
বাজিছে উভের মনে তাতে নাহি আন॥

বিয়ানবেলা যায় কুমার সন্ধ্যাবেলা আসে।
দিনের মধ্যে তিন বার পরিচয় জিজ্ঞাসে॥

  1. এন=হেন
  2. উপচিল=উপস্থিত হইল।
  3. গুঞ্জরী=গুঞ্জত্নী, পদাভরণবিশেষ।