পাতা:মৈমনসিংহ গীতিকা (প্রথম খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/২৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দস্যু কেনারামের পালা
১৯৯

ভাসান গাইতে পিতা যান দেশান্তরে।
পথে পাইয়া কেনারাম আগুলিল তারে॥

খোল বাজে করতাল বাজে বাজে একতারা।
পিতার সহিতে গায় শিষ্য সঙ্গে যারা॥
শ্রী অঙ্গেতে নামাবলী সন্ন্যাসীর বেশ।
ললাটে তিলক ছটা দীর্ঘ জটা কেশ॥
ভাবেতে বিভোর যত ভক্ত সমুদয়।
আগে আগে যান পিতা পাছে শিষ্যচয়॥
প্রেমানন্দে হস্ত তুলে কেহ গলা ধরে।
কেহ বা অশ্রুতে ভাসি পড়ে ধরা পরে॥
না জানে কোথায় তারা গান গাইয়া যায়।
কোথায় আইল নাহি চক্ষু তুলে চায়॥

গাইতে গাইতে আইলা জালিয়া হাওরে।
চারিদিক বেড়িয়াছে নলে আর খাগরে॥
মানুষের নাই নামগন্ধ অষ্টপ্রহর জুড়ি।
নল আর খাগড়ে সব রহিয়াছে বেড়ি॥

দূরেতে উঠিল ধ্বনি ‘জয় কালী’ নাম।
সন্মুখে দাঁড়াইল আসি দস্যু কেনারাম॥
পাছু হইয়া খাড়া রয় দস্যুগণ যত।
কমরবান্ধা মালকোচা খাণ্ডা লইয়া হাত॥
পাহাড়িয়া দেহ যেন কাল মেঘের সাজ।
যমদূতগণ সঙ্গে যেন যমরাজ॥
আগুলিয়া কেনারাম জিজ্ঞাসে পিতারে।
“কেমন ঠাকুর তুমি চেন কি আমরারে॥”

হাসিয়া কহেন পিতা ডাকাইতের স্থানে।
“পাপেরে দেখিয়া বল কেবা নাহি চিনে॥”

“দেহ যাহা আছে" দস্যু কহে উচ্চৈস্বরে।
ঝুলি ঝাড়িয়া পিতা দেখান সবারে॥