ঠাকুর কহিলা “আমি দরিদ্র বামন।
আমার মাসেতে তোমার কোন প্রয়োজন॥”
কেনা কয় “শীঘ্র করি নাম নাহি বল।
সময় করিয়া নষ্ট আছে কিবা ফল॥”
ঠাকুর কহিলা “মোর দ্বিজবংশী নাম।”
শুনিয়া চমকিয়া উঠে দস্যু কেনারাম॥
“তুমি ঠাকুর দ্বিজবংশী যার নাম শুনি।
পাগ্লা ভাটীয়াল নদী বহে যে উজানি॥
পাষাণ গলিয়া মেঘ বর্ষে যার গানে।
সেই দ্বিজবংশী তুমি খাগরের বনে॥
পশুপক্ষী উড়িয়া আসে যার গান শুনিয়া।
ভুজঙ্গ চলিয়া যায় শির নোয়াইয়া॥”
কহেন ঠাকুর শুনি এতেক বচন।
“আমার গানেতে গলে কঠিন পাষাণ॥
পাষাণ গলাইতে আমি পারি শতবার।
কিন্তু মানুষের মন গলাইতে ভার॥
বনের পশুপক্ষী মোগ্ধ[১] আমার গান শুনি।
না পারিলাম গলাইতে মানুষের প্রাণী॥
লৌহের বাড়াই[২] দেখ মানুষের প্রাণ।
শাপেতে হইয়াছে যেমন অহল্যা পাষাণ॥”
এতেক শুনিয়া কেনা নীরব হইলা।
কেনারে ডাকিয়া পিতা কহিতে লাগিলা॥
“লইয়া পরের ধন কোন কর্ম্ম কর।
পাপেতে মজিয়া কেন ভরা বুঝাই[৩] কর॥
এ ভরা ডুবিবে তোমার মাইঝ[৪] গাঙ্গের জলে।
বন্ধু না খারাইবে[৫] কেউ তোমায় ধইরা তুলে॥
পাতা:মৈমনসিংহ গীতিকা (প্রথম খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/২৫৪
অবয়ব
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২০২
মৈমনসিংহ-গীতিকা