তার ডিঙ্গায় তুলিয়া আপন দেশে চলিয়া গেল। বাড়ীঘর দেখিয়াই কাজলরেখা সমস্ত চিন্ল, কিন্তু কাহাকেও কিছু না বলিয়া কাজলরেখা মনে মনে কান্দিতে লাগিল।
গান—
“আছে আছে হাতীরে ঘোড়া যে যাহার রে ঠাঁই।
অভাগিনী কাজলরেখার রে মাও বাদ নাই॥
বড় বড় দালানকোঠা যে রইয়াছে পড়িয়া।
জন্মের মত মাও বাপ গিয়াছে ছাড়িয়া॥
এই ঘরে মায়ের কোলে পালঙ্কে শয়ন।
ঘুমাইয়া দেখ্যাছি কত নিশার স্বপন॥
এই ঘরে থাকিয়া মায় দিছে ক্ষীরননী।
সেই মায় হারাইছি আমি জন্ম-অভাগিনী॥
হায় বাপ ধনেশ্বর রইছ কোথাকারে।
তোমার কন্যা ধরে আইছে বার বছর পরে॥
মাও নাই বাপ নাই নাই শুকপক্ষী।
বড় বাড়ীর বড় ঘরে রইয়াছি একাকী॥”
এক দুই তিন করি মাসেক গুয়ায়।
কাঁদিতে কাঁদিতে কন্যার দুঃখে দিন যায়॥
ধাই দাসী আস্যা সবে কন্যারে জিজ্ঞাসে।
একদিন রত্নেশ্বর সাধু আইল কন্যার পাশে॥
“বিধুমুখী কন্যালো (কন্যা আলো) ছিলা ক্ষীরসমুদ্রের চড়ে।
ভাটি বাগ[১] বাইয়া আমি উদ্ধার করলাম তোরে॥
হাঙ্গর-কুম্ভীরে তোরে করিত ভক্ষণ।
বাড়ীতে আনিলাম কন্যা করিয়া যতন॥
না কর্ছি না কর্ছ বিয়া যৌবনকাল যায়।
অনুমতি পাইলে বিয়া করিবাম তোমায়॥
- ↑ বাগ=বাঁক, নদীর বাঁক।