পাতা:মৈমনসিংহ গীতিকা (প্রথম খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৪০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৪২
মৈমনসিংহ-গীতিকা

“আমারও যে পরিচর রে কুমার আমি কইতে নারি।
দশ বচ্ছর কালে বাপে কর্‌ল বনচারী।
শুকপক্ষী আছে এক সুইচ রাজার পুরে।
পরিচয়-কথা সেই কহিবে তোমারে॥
আমার বিয়ার ঘটক সেই পক্ষিয়াজ।”



(২০)

 তখন সদাগর শুকপক্ষীকে আনিবার জন্য সূইচ রাজার পুরে লোক পাঠাইল। ডিঙ্গা ভরা ধন-রত্ন লইয়া সাধু রত্নেশ্বরের লোক-লস্কর সূইচ রাজার দেশে রওনা হইল।

 এদিকে অইল কি—কাজলরেখাকে নির্ব্বাস দিয়া সুইচ রাজা একেবারে পাগল অইয়া দেশে দেশে ডিঙ্গা কইরা তার খোঁজে বাইর অইছে[১]। সুইচ রাজা এক রাজার দেশ হইতে আরেক রাজার দেশ, এক সমুদ্রের পার হইতে আর এক সমুদ্রের পার ঘুইরা ঘুইরা বেড়াইতেছে। এই সময় রত্নেশ্বরের লোক ডিঙ্গাভরা ধন লইয়া সুইচ রাজার দেশে গিয়া উপস্থিত হইল। ধনের লোভে কাঙ্কণদাসী শুকপক্ষীটিকে বিক্রয় কইরা[২] ফাল্‌ল। তখন শুকপক্ষী লইয়া তারা রত্নেশ্বরের রাজ্যে ফিইরা আইল[৩]। তখন ঢোল-ডঙ্কা দিয়া রত্নেশ্বর-সাধু ঘোষণা কর্‌ল যে, সে সমুদ্র থাইক্যা যে এক জল-পরী ধইরা আন্‌ছে[৪] তারে আইজ বিয়া কর্‌ব[৫]। সকলে আশ্চর্য্য অইয়া গেল। খুব বেশী আশ্চর্যের কথা এই যে, একটা বনেলা শুকপক্ষী তার (কন্যার) জন্মবৃত্তান্ত ব্যক্ত কর্‌ব। এই কথা শুইন্যা যত দেশের যত রাজা, ধনী সদাগর সব আইস্যা[৬] সভাস্থলে একত্র অইল। কতক্ষণ পরে এক সোনার পিঞ্জরের মধ্যে কইরা একটা শুকপক্ষীরে আইন্যা উপস্থিত করা হইল।

 বল্‌তে ভুইল্যা[৭] গেছ্‌লাম যে কাজলরেখার স্বামী সুইচ রাজা, সেও এই সভায় উপস্থিত ছিল।

  1. অইছে=হইয়াছে।
  2. কইরা=করিয়া।
  3. ফিইরা আইল=ফিরিয়া আসিল।
  4. ধইরা আন্‌ছে=ধরিয়া আনিয়াছে।
  5. কর্‌ব=করিবে।
  6. আইস্যা=আসিয়া।
  7. ভুইল্যা=ভুলিয়া।