সুধাস্রাবী গীতি শ্রোতাকে শোকদুঃখময় জগতের কথা ভুলাইয়া দিত।
কেবল নারীসুলভ কোমল কারুকার্য্যে নয়, এই লোকললামভূতা ললনার মৃণাল ভুজদ্বয় সময়-সময় যে পৌরুষের পরিচয় প্রদান করিত, তাহাতে চমৎকৃত হইতে হয়। মৃগয়া-ব্যাপারে ইঁহার অদ্ভুত পটুত্ব মনে অকপট বিস্ময়ের উদ্রেক করে। দ্বাদশ রাজ্যাঙ্কে জহাঙ্গীর এক দিন নূরজহান্কে লইয়া শিকারে বহির্গত হ’ন। ভূত্যেরা চারিটি ব্যাঘ্রকে বেষ্টনী-মধ্যগত করিলে, নূরজহান্ স্বহস্তে তাহাদিগকে নিহত করিবার জন্য সম্রাটের অনুমতি লইয়া, হস্তিপৃষ্ঠে হাওদার ভিতর হইতে অব্যর্থ লক্ষ্যে দুইটি ব্যাঘ্রকে দুইটি গুলিতে, এবং অবশিষ্ট দুইটিকে, দুইটি কবিয়া চারিটি গুলিতে বধ করেন। ‘তুজুকে’ সম্রাট্ স্পষ্টই লিখিয়াছেন, তিনি ইতঃপূর্ব্বে এরূপ অব্যর্থ লক্ষ্যে ব্যাঘ্র-শিকার দেখেন নাই। জহাঙ্গীর খুশী হইয়া নূরজহানকে এক লক্ষ টাকা মূল্যের এক জোড়া হীরার পুঁছি (bracelet) ও হাজার আশ্রফি উপহার দেন। এই ব্যাঘ্র-শিকার উপলক্ষে সম্রাটের এক জন সভাসদ্ নিম্নলিখিত কবিতাটি রচনা করিয়াছিলেন:—
“নূরজহান্ গর্চে বা সুরৎ জন্ অস্ত্।
দর্ সফ্-ই-মর্দান্ জন্-ই-শের-আফ্কন্ অস্ত।”