পাতা:মোহন অম্‌নিবাস প্রথম খণ্ড.pdf/১০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

3 Օ 8 মোহন অমনিবাস আমার বুকের মাঝে একটা ব্যথা অনুভব করলুম। হয়তো আনন্দের উত্তেজনা। কখন ও তো এমন পরিস্থিতিতে পড়িনি আমি। আমি ডাকলুম, “রমা, রানী।” রমা আয়ত-চক্ষু মেলে বললে, “বলো।” “চিরদিন আমাকে এমনি ভালবাসবে তো? কোন কারণেই আমাকে ঘৃণা করবে না তো, রানী?” আমার স্বর রুদ্ধ হয়ে এলো। রমা বললে, “তোমাকে ঘৃণা করবো আমি ? তোমাকে?” রমার মুখে হাসি ফুটে উঠল। পুনরায় বললে, “নারী যা’কে একবার মন দেয় কিশোর, সে মরে যায়, তবু সে মন আর ফিরিয়ে নিতে পারে না।” এমন সময়ে জাহাজ এসে জেটির সম্মুখে লাগল। ধীরে ধীরে জাহাজের সিড়ি নামানো হ’ল। কিন্তু ওকি ? আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ডিটেকটিভ মিঃ বেকার এখানে ? কই, তা’ তো জানতাম না। রমা আমার বিস্মিত ভাব দেখে বললে, “কি হয়েছে, কিশোর?” আমি মৃদু হেসে বললুম, “ঐ যে মধ্যবয়স্ক দীর্ঘ চেহারা একজন সাহেব সিড়ির পাশে দাড়িয়ে আছেন—দেখতে পাচ্ছ, রমা ? উনি একজন বিখ্যাত গোয়েন্দা। দসু্য মোহনের ভয়ানক শক্র। এবার যে মোহনের আর রক্ষা নেই, তা’ আমার মন বলছে।” সহসা রমা আনন্দে উত্তেজিত হয়ে নিষ্ঠুর স্বরে বললেন, “যদি উনি দস্যকে ধরতে পারেন, তবে আমার চেয়ে বেশী খুশি আর কেউ হবে না। তা হলে আমরা একটু অপেক্ষা করি এসো, কিশোর। দসু্য ধরা পড়লে, তাকে দেখে তবে যাবো আমরা। সত্যি, দসু্যু মোহনকে দেখতে এত ইচ্ছে হচ্ছে আমার!” “আমি বললুম, বেশ, তাই হবে। কিন্তু আমার বিশ্বাস, মোহন আগে কিছুতেই নামতে চাইবে না। যখন চেয়ে চেয়ে মিঃ বেকার বিরক্ত হয়ে উঠবেন, দৃষ্টি ক্লান্ত হয়ে পড়বে, তখনই সে নামতে ভরসা পাবে।” - রমা বললে, “এমনও তো হতে পারে, দসু বহু পূর্বেই নদীতে কঁাপিয়ে পড়ে সাঁতার আমি বললুম, “না, তা সম্ভব ছিল না। কারণ ক্যাপ্টেন দিনে ও রাত্রে জাহাজের পাশে বন্দুক হাতে কয়েকজন প্রহরী নিযুক্ত করেছিলেন। তাদের ওপর হুকুম ছিল কাউকে পালাতে দেখলেই নির্বিচারে গুলি চালাতে। ওসব কথা থাক, ঐ দেখ যাত্রীরা নামতে শুরু জাহাজের একজন অফিসার তার পিছনে দাঁড়িয়ে কানে কানে মাঝে মাঝে বোধ হয় যাত্রীদের পরিচয় দিচ্ছেন। একে একে বহু যাত্রী নেমে যাবার পর আমাদের প্রফুল্ল মিত্র যাচ্ছে দেখে রমা বললে, “ঐ দসু মোহন যাচ্ছে। এখনি ওকে গ্রেফতার করবে, দেখো!” প্রফুল্ল সিড়ির মুখে যাবার পূর্ব মুহুর্তে আমি রমাকে বললুম, “রমা, আমার ইচ্ছা যায়, প্রফুল্ল ও বেকার সাহেবের একটা ছবি তুলি, কিন্তু আমার হাত জোড়া, তুমি যদি পারো তো ভাল হয়।”