পাতা:মোহন অম্‌নিবাস প্রথম খণ্ড.pdf/১৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কারাগারে মোহন * 8. § কহিল, “নীলকমল দে।” বিচারক হাসিয়া উঠিলেন; কহিলেন, “তোমার এই নতুন এবং অদ্ভুত উপায়ে আত্মপক্ষ সমর্থনের অর্থ আমি বুঝিতে অক্ষম, মোহন। যদি তুমি ভেবে থাকো, এইরকম নির্লিপ্ত ব্যবহার কোরে তুমি লাভবান হবে, তবে আমার কোন আপত্তি নেই। আমি কোনও দিকে দৃকপাত না কোরে তোমার বিচার শেষ করবো—তুমি যত খুশি ন্যাকামি করতে পারো।” অতঃপর বিচারক দস্য মোহন কর্তৃক সমাধিত চুরি ও ডাকাতির ইতিহাস বর্ণনা করিয়া তাহার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধারায় চার্জ গঠন করিবার পূর্বে সাক্ষ্য গ্রহণ করিবার ইচ্ছা প্রকাশ করিলেন। একে একে বহু সাক্ষী আসিয়া সাক্ষ্য দিয়া যাইতে লাগিল। এক সাক্ষীর সাক্ষ্য । অন্য সাক্ষ্যের সহিত মিলিল না। বহু সাক্ষী বহু রকমের আজগুবি সাক্ষ্য দিতে লাগিল। কিন্তু একটা বিষয়ে সকল সাক্ষীর মিল দেখা গেল যে, কোন সাক্ষই দস্য মোহনকে চেনে না; সুতরাং সে যে সত্যই মোহন এবং তাহাকে যে পূর্বে এ বেশে কখনও কেহ দেখিয়াছে, তাহা হলফ করিয়া কেহই বলিতে পারিল না। o নানা সাক্ষীর নানা সাক্ষ্যবস্তু অবগত হইয়া আদালত গৃহের জনতা গুঞ্জন করিতে লাগিল। অবশেষে মোহনের একমাত্র যোগ্য শক্র ও বন্ধু প্রধান সাক্ষী ডিটেকটিভ ইনস্পেক্টার উঠিল। তিনি কি বলেন শুনিবার জন্য সকল ব্যক্তিই উৎকর্ণ হইয়া রহিল। কিন্তু সুবিখ্যাত ডিটেকটিভের আচরণ সকলের মনে প্রথমেই বিস্ময় উদ্রেক করিল। যখন মিঃ বেকার আসামীর কাঠগড়ার দিকে চাহিলেন, তখন তাহার মুখ হঠাৎ স্নান ও বিরক্তিতে পূর্ণ হইয়া উঠিল। যাহা হউক, তিনি কাঠগড়ার উপর দুই বাহু রাখিয়া কি করিয়া দসু মোহনকে রেঙ্গুন বন্দরে গ্রেফতার করিয়াছিলেন, তাহার বিশদ ইতিহাস একে একে বর্ণনা করিলেন। কেমন করিয়া তিনি কলিকাতা হইতে মোহনের অনুসন্ধানে রেঙ্গুন গিয়াছিলেন, কেমন করিয়া তিনি মোহনকে চিনিতে পারিয়াছিলেন, পরে রেঙ্গুন হইতে ৩াহাকে পাইয়া বরাবর মাদ্রাজে উপস্থিত হইয়াছিলেন, তাহাও বিবৃত করিলেন। আদালতগৃহের জনতা মিঃ বেকারের বর্ণনা রুদ্ধ নিঃশ্বাসে শ্রবণ করিতে লাগিল। তাহারা যেন অতিশয় বিস্ময়কর কোন রূপ-কথা শুনিতেছে—বিস্ময়, হতাশা, শ্রদ্ধা, উত্তেজনার ভাব ক্ষণে ক্ষণে জনতার মুখে চোখে পর্যায়ক্রমে প্রতিফলিত হইতেছিল প্ৰ অবশেষে মিঃ বেকার মোহনের সহিত তাহার জেলে আলাপেরকাহিনী, যথা মোহনের গর্ব যে সে বিচারের দিনে আদালতে হাজির হইবে না, কুমার নিত্যবিক্রমের মণি-মুক্তা প্রভৃতি মূল্যবান দ্রব্যসমূহ অপহরণের অদ্ভুত কাহিনী, পরিশেষে তাহার পকেট মারিয়া ঘড়ি লইবার কৌতুহলোদ্দীপক ইতিহাস বিবৃত করিলে জনতা হর্ষধ্বনি করিয়া উঠিল। বিচারক জনতাকে নীরব থাকিবার জন্য কড়া আদেশ দিলেন। মিঃ বেকারকে দেখিয়া অত্যন্ত অসুস্থ বোধ হইতেছিল; কারণ তিনি সাক্ষ্য-কাহিনী বিবৃত করিবার সময় বার বার ক্লান্ত হইয়া নীরব হইতেছিলেন। বিচারক তাহা লক্ষ্য করিয়া আদেশ দিলেন, “আপনি যদি অসুস্থ হয়ে থাকেন, তবে আপনি একটু বিশ্রাম গ্রহণ করুন। পরে আপনার বাকী সাক্ষ্য গ্রহণ করবো।” মিঃ বেকার প্রতিবাদ করিয়া কহিলেন, “না, না, স্যার, শুধু সামান্য একটু....” এই >