পাতা:মোহন অম্‌নিবাস প্রথম খণ্ড.pdf/১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মোহন অমনিবাস טי כי করিয়া একখানি কুশানটপ চেয়ারের উপর বৃদ্ধ জমিদার নীলরতনবাবু বিকৃত যৌবনের প্রেমমূর্তির মত বসিয়া ভাবী শ্বশুরের প্রতীক্ষা করিতেছিলেন। সহসা নীলরতন ক্ৰোধ-তপ্ত স্বরে কহিলেন, “এত দেরি হচ্ছে কেন?” সেক্রেটারী বিজন রায় বুঝিতে না পারিয়া কহিল, “কার দেরি হচ্ছে, বাবু?” “যমের আর কার?” জমিদার যেন ফাটিয়া পড়িলেন। প্রাইভেট সেক্রেটারী বিজন রায় অন্তরের সহিত বিশ্বাস করিল যে, সত্যই যমরাজ এই পাষণ্ডটিকে লইয়া যাইতে অযথা অত্যন্ত দেরি করিতেছেন। প্রকাশ্যে কহিল, “আমি একবার দেখব ?” - “কি দেখবে তুমি?” জমিদার বিরক্ত স্বরে জিজ্ঞাসা করিলেন। বিজন রায় প্রায় বলিয়া ফেলিয়াছিল যে—যমকে। কিন্তু এমন সময়ে আশুতোষবাবুর আগমনে অশান্তকর পরিস্থিতি শান্ত হইল,নীলরতন বাত-যন্ত্রণা-কাতর মুখে হাসি টানিয়া কহিলেন, “এই যে আসুন। আমি ভাবছিলাম, আবার কাউকে পাঠাবো কি-না। বসুন, বসুন।” যে প্রতাপান্বিত জমিদারের সম্মুখে ইতিপূর্বে আশুতোষ দে’র মত ব্যক্তি দাঁড়াইয়া কম্পিত-কলেবর হইতেন, সেই ব্যক্তিই সহসা কি করিয়া মূল্যবান কোঁচের উপর এক কথায় বসিতে পারেন, তাহা আশুতোষবাবু ভাবিয়া পাইবার পূর্বেই পুনরায় অনুরোধ রূপে আদেশ আসিল, “দাঁড়িয়ে রইলেন যে? বসুন। সেক্রেটারীর দিকে চাহিয়া কহিলেন, “পাজিটে নিয়ে এসো। আর পুরোহিত বাইরের কাছারিতে অপেক্ষা করছে, ডেকে পাঠাও। দেরি হয় না যেন | যাও।” বিজন রায় দ্রুতপদে বাহিরে হইয়া গেল। জমিদার কহিলেন, “আমি ভাবছি কি, পাকা দেখার কাজটা শেষ করে রাখি। মাঝে আর মাত্র মাসখানেক সময় আছে। এর মধ্যে আমাকে সব আয়োজন—যদিও তেমন বিশেষ কিছু নয়, তা হলেও আমার না হয় একটু বয়স হয়েছে, কিন্তু আপনার কন্যার তো আর হয় নি! তা ছাড়া তার তৃতীয় বিবাহও নয়, বরং আমারই তৃতীয় পক্ষ। আপনি কি বলেন?” ડેડ আশুতোষবাবু হাসিমুখে কহিলেন, “আমার আর কি বলবার আছে? একটু আগে মাধুরীকে বলছিলাম যে, দেখ মা, তোর বাবার চোঁদপুরুষের সৌভাগ্য যে, তুই এমন ঘরে পড়ছিস। তোর দরিদ্র বাবা তোকে একখানা ভাল কাপড় পর্যন্ত দিতে পারেনি:কিন্তু এবার তোর দেহে মণি-মুক্তা ধরবে না। ভগবানের কাছে প্রার্থনা কর, যেন তোর ভাগ্য চিরকাল এমনই সুপ্রসন্ন থাকে।” নীলরতনের মুখ পশু-হাস্যে বিকৃত হইল,কহিলেন, “আমার যা কিছু সবই না হোক, অর্ধেকই তার নামে উইল কোরে দেবো। ভাল কথা আপনার কথা শুনে কি বললেন তিনি অর্থাৎ আপনার কন্যা।” আশুতোষবাবু অমায়িক হাস্যে কহিলেন, সে বেটি আবার কি বলবে? তার মুখ যে হাসিতে ভরে গেল, তা’ কি আর আমার চোখকে ফাকি দিতে পারে?” নীলরতন বাতের যন্ত্রণা ভুলিয়া কহিলেন, “গয়নাগুলোর যতটা হয়, এই মাসের মধ্যে কলকাতায় জুয়েলারের কাছে মাপ পাঠিয়ে দিয়েছি। এদিকে তো যত সব হতভাগারা