পাতা:মোহন অম্‌নিবাস প্রথম খণ্ড.pdf/২৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Հ8 o মোহন অমনিবাস মিঃ সোম ভূ-কুঞ্চিত করিয়া কহিলেন, “কি প্রস্তাব?” “তিনি এই দুর্গ-প্রাসাদটি ক্রয় করতে চান। বললেন, যে-কোন মূল্য আমি দিতে প্রস্তুত।” মিঃ ঘোষাল একবার মুখ তুলিয়া চাহিয়া পুনরায় মুখ অবনত করিলেন। মিঃ সোম অত্যধিক বিস্ময়ে ক্ষণকাল নীরব থাকিয়া কহিলেন, “আমার প্রাসাদ কিনতে চান? যে-কোন মূল্যে ? কিন্তু আমি যে বিক্রি করব, এমন কথা রটাবার দুঃসাহস কার হয়েছে জানেন?” “না স্যার। তাই ভদ্রলোকের প্রস্তাব শুনে আমি অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হয়ে উঠি, এমন কি তাকে অপমান করতেও যাই, কিন্তু তিনি যখন বললেন, যে-কোন মূল্যে তিনি কিনতে রাজি আছেন, তখন আপনাকে জানানো আমার কর্তব্য বলেই নিবেদন করলাম।” মিঃ ঘোষাল আপন কৈফিয়ত দাখিল করিলেন। মিঃ সোম অসহ ক্রোধ অতি কষ্টে নিরোধ করিয়া কহিলেন, “এমন সব লোককে আমার প্রাসাদে প্রবেশ করবার অনুমতি পর্যন্ত দেবেন না আপনি।” মিঃ সোম দ্রুতপদে কক্ষ হইতে বাহির হইয়া গেলেন। মিঃ ঘোষালের মুখে মৃদু হাসি ফুটিয়া উঠিল। তিনি একবার চারিদিকে চাহিয়া যে লৌহসিন্দুকে মিঃ সোম দলিলটি রাখিয়া গেলেন, সেইদিকে নির্নিমেষ দৃষ্টিতে চাহিয়া রহিলেন। (S) রমার বিশীর্ণ মুখের দিকে একবার চাহিয়া রায়বাহাদুর সরোজকে কহিলেন, “অনেক দিন ‘মোহন ভায়ার কোন সংবাদই পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি বানপ্রস্থ অবলম্বন করলেন না-কি, সরোজ ?” 4. - সরোজ মৃদু হাসিয়া কহিল, “মোহনের জন্য দাদুর মনে এতখানি উদ্বেগ, তা’ তো জানতাম না, দাদু?” “আরে ভাই, উদ্বেগ কি আর সাধে হয় । তার মত মহাপুরুষ যত দূরে দূরে থাকেন, ততই আমার মত অভাজনের পক্ষে নিরুদ্বেগে কাল যাপনের প্রশস্ত সময় তিনি দূরে বহুদূরে থেকে ভারী জনের ভার লাঘব করেছেন, সংবাদপত্রে সেই সব হৃদয় স্তম্ভকারী মুখরোচক সংবাদ ছাপা হচ্ছে, আর আমরা বহুদূর ব্যবধানে থেকে সকাল-সন্ধ্যার অলস ঘন্টাগুলি মুখর ও দ্রুত করে তুলছি, এমন সম্ভাবনার প্রতীক্ষায় থাকা কি কম উদ্বেগের ব্যাপার, ভায়া ? কিন্তু—” রমার দিকে চাহিয়া কহিলেন, “কিন্তু রমা, দিন দিন তোর এমন চেহারা হচ্ছে কেন, ভাই? আমাদের মহাপুরুষের জন্য উদ্বেগের একটা অর্থ হয়, কিন্তু রমা ভুকুটি ভঙ্গি কৃত্রিম কুপিত স্বরে কহিল, “আবার দাদু?” রায়বাহাদুর নড়িয়া-চড়িয়া কহিলেন, “দেখ ভাই, তোদের মত তরুণী মেয়েরা ভাবে, আমরা বুড়ো হয়েই বুঝি জন্মগ্রহণ করেছি। কিন্তু তা নয় দিদি। আমাদের এককালে— তোদের ভাষায়—তরুণ অবস্থা ছিল। আমরাও তোদের মত কানায় কানায় ভরে থেকে জগৎকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করতাম। কিন্তু এখন ভাবি, যে সময়টা অহঙ্কারের বশে হেলায় নষ্ট করেছি, তখন কত কি-ই না করতে পারতাম !”