পাতা:মোহন অম্‌নিবাস প্রথম খণ্ড.pdf/৪৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রমা-হারা মোহন 8 Ն, Գ মিনিষ্টারের আনন্দোজ্জ্বল মুখে হতাশার ছায়া ফুটিয়া উঠিয়াছে। তাহার ভূ-যুগল কুঞ্চিত হইয়া গিয়াছে। তিনি দুই করতলের উপর মাথা রাখিয়া মোহনের দিকে স্নান মুখে চাহিলেন। মোহন ভীত কষ্ঠে কহিল, “কি হ’ল ? ব্যাপার কী ?” মিনিষ্টার অতি কষ্টে কহিলেন, “এটা জাল দলিল। এর মূল্য এক কানা কড়িও নয়। তুমিও প্রতারিত হয়েছ, মোহন।” মোহনের কষ্ঠ হইতে এমন একটা শব্দ উখিত হইল, যাহা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। সে ক্ষণকাল অর্থহীন দৃষ্টিতে চাহিয়া কহিল, “আপনি নিশ্চয় জানেন, এই দলিল জাল ?” মিনিষ্টার আত্মসম্বরণ করিয়া কহিলেন, “কাগজের ওপর মৃত্যু পণ প্রতিজ্ঞা-পত্র সম্পাদিত হয়েছিল, সঙেঘর মাত্র বারোটি সভ্যের নাম সেই বিশেষ কাগজে বিশেষভাবে জলছবিতে মুদ্রিত হয়ে নরওয়ে থেকে অর্ডার দিয়ে আনা হয়েছিল। তাছাড়া মিঃ সোমের নামও সাক্ষ্য দিচ্ছে, এই দলিল জাল। উপরন্তু আমার নাম-সই ওরূপ ছিল না। একটি বিশেষ চিহ্ন ছিল, যা এতে নেই। সুতরাং এতগুলি অভাব যে-দলিলে, সেই দলিল সম্বন্ধে নিশ্চিত হওয়া খুব বেশী শক্ত কাজ কী ?” মোহন সক্রোধে দলিলটি টুকরো টুকরো করিয়া ছিড়িয়া ফেলিয়া কহিল, “এই প্রতারণার জন্য আমি শয়তানকে এমন শিক্ষা দেব, যা ভাবতেও সে শিউরে উঠবে। মোহনের সঙ্গে প্রতারণার শাস্তি কি তা’ এই বিশ্বাসঘাতক নরপিশাচকে বুঝিয়ে দেব আমি।” মিনিষ্টারের সব আগ্রহ, উত্তেজনা জল হইয়া গেল। তিনি কহিলেন, “অসম্ভবের পিছনে ছুটেছ, মোহন।” মোহন দৃঢ় স্বরে কহিল, “মোহনের অভিধানে অসম্ভব বলে কোন শব্দ নেই। কিন্তু শুনুন, আমার প্রস্তাব এই যে, আমি যত শীঘ্ৰ পারি ওই দলিলখানা আপনার কাছে তুলে দেব, কিন্তু তা’র বিনিময়ে সরোজের স্বাধীনতা আপনাকে দিতে হবে। আপনি সম্মত ?” মিনিষ্টার কহিলেন, “কতদিন অপেক্ষা করতে হবে ?” মোহন চিন্তিত স্বরে কহিল, “দু সপ্তাহ সময় আমি নিলুম।” মিনিষ্টার স্নান হাসিয়া কহিলেন, “উত্তম। কিন্তু মোহন, তুমি ভুলে যেও না, তোমাকে গ্রেপ্তার করবার জন্য আমরা কিরূপ উদগ্রীব আছি।” só8 মোহন মিনিষ্টারের সঙ্গে করমর্দন করিয়া কক্ষের বাহিরে আসিয়া দেখিল, রায়সাহেব অবিনশচন্দ্র রায় মিনিষ্টারের সহিত সাক্ষাৎকরিবার জন্য অস্থির হইয়া উঠিয়াছেন, তাহাকে সাজেন্ট বলিতেছে, “সরি, রায়সাহেব, রাজা অফ চিচিংগড় মিনিষ্টারের সঙ্গে জরুরী আলাপ করছেন।” - মোহন এক মুহুর্ত থমকিয়া দাঁড়াইল। রায়সাহেব চক্ষু কপালে তুলিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “কে আলাপ করছেন, অফিসার ? রাজা অফ... ?” “চিচিংগড়’, রায়সাহেব। মোহন হাসিতে হাসিতে বলিয়া অগ্রসর হইয়া সিড়ির মুখে উপস্থিত হইল। সাজেন্ট সন্ত্রম সহকারে স্যালিয়ট করিল। শাস্ত্রী-পাহারা বন্দুক বক্ষে নামাইয়া সন্মান প্রদর্শন করিল; আর রায়সাহেবের ক্ষুদ্র গোলাকার চক্ষু দুটি ঈষৎ প্লঞ্জন চশমার ভিতর বৃহদায়তন হইয়া উঠিল। রাজা অফ চিচিংগড়ের মোটর তখন ছুটি : আরম্ভ করিয়াছে।