পাতা:মোহন অম্‌নিবাস প্রথম খণ্ড.pdf/৪৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রমা-হারা মোহন 8 তবে পারবেন।” কবিতা উত্তরের জন্য অপেক্ষা না করিয়া দ্রুত পদে অদৃশ্য হইয়া গেল। মোহনের মনে পড়িল, দুঃখিনী তরুণী তাহার শ্রান্ত দেহের দিকে চাহিয়া মৃত্যুপথ-যাত্রী স্বামীর প্রশ্ন পর্যন্ত স্থগিত রাখিয়াছে। মোহনের মন শ্রদ্ধায়, সন্ত্রমে এই তরুণীর পদতলে লুটাইয়া পড়িতে চাহিল। আসুন।” মোহন এক মুহূর্ত নীরবে দাড়াইয়া থাকিয়া কহিল, “চল।” মোহন স্নান-কক্ষে প্রবেশ করিয়া দেখিল, মানের ও মুখ ধুইবার জন্য প্রয়োজনীয় প্রত্যেকটি দ্রব্য সাজান রহিয়াছে, উপরন্তু তাহার পরিধানের জন্য একখানি শুভ্ৰ ধূতি ও গরদের চাদর রাখা হইয়াছে। সারারাত্রি ভ্রমণজনিত কষ্টে মোহনের শ্রাস্তি ও ক্লাস্তির অবধি ছিল না। সে প্রাতঃকৃত্য শেষ করিয়া উত্তমরূপে স্নান করিয়া যখন স্নান-ঘর হইতে বাহির হইল, তখন তাহার দেহের অর্ধেক অবসাদ দূর হইয়া গিয়াছে। সে বাহিরে আসিয়া দেখিল, পরিচারিকাটি অপেক্ষা করিতেছে। তাহার সহিত সে কক্ষে প্রত্যাবর্তন করিয়া দেখিল, বধূ কবিতা স্নান সমাপনান্তে তাহার জন্য গরম চা ও খাবার লইয়া অপেক্ষা করিতেছে। মোহন বধুর শাস্ত, সংযত, স্নিগ্ধ, পবিত্র মুখের দিকে চাহিয়া বিস্মিত হইয়া গেল। এমন একটি শুদ্ধ আভাস তাহার সারা মুখে পরিব্যাপ্ত রহিয়াছে, যেখানে কোন দ্বিধা, সংশয় অথবা সঙ্কোচের স্থান ছিল না। মোহন নীরবে জলযোগ সারিয়া প্রথমে সরোজের ও সরোজ-সংশ্লিষ্ট সমুদয় কাহিনী সংক্ষেপে বর্ণনা করিয়া কহিল, “এইবার বলুন বৌঠান, লুন্ঠনের কাহিনী শুনি।” র্তার মন কিছুতেই শান্ত হচ্ছে না। সর্বদা ভয় করছে। তার মনে হচ্ছে যেন একটা মহা বিপদ আসছে, আর তারই পূর্বাভাষ পেয়ে, তার মন আকুল হয়ে উঠেছে।” মোহন কহিল, “কোন অপরিচিত ব্যক্তিদের কথা রানী বলেছিল ?” তু “হা, দিদি বলেছিলেন। প্রতিদিন সকালে ও বিকেলে এমনি বহু অপরিচিত লোক আপনার বাড়ীর দিকে চেয়ে থাকে, দিদি পথে বার হলে সঙ্গ নেয়.পিছু পিছু আসে। কিন্তু বাবা তাকে বলেন, ও-সব কিছু নয় মা। একে তো পবিত্র প্রসিদ্ধ তীর্থস্থান এটা; তার ওপর তোমার প্রাসাদ এখানে সর্ব রকমে শ্রেষ্ঠ বাড়ী। সুতরাং মানুষের কৌতুহল হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু দিদি কিছুতেই মনে সাস্তুনা পান না। তিনি বলে যান, যে কয়দিন না আপনি আসেন, তিনি এখানে এসে থাকবেন। তারপর তার ফেরত যাবার পথে কি ঘটে কিছুই জানিনে।” কবিতার একটি দীর্ঘশ্বাস বাহির হইল। মোহন কহিল, “তখন কত রাত্রি , যখন রানী আপনাদের বাড়ী থেকে ফিরে যায় ?” “রাত্রি ৯ টা তখন। রাত্রি এগারোটার সময় দিদিকে প্রাসাদে ফিরতে না দেখে একজন কবিতা অশ্রুভারে ভাঙিয়া পড়িল। “রানী কি একা এসেছিল ?” মোহন কিছুক্ষণ পরে প্রশ্ন করিল।