পাতা:মোহন অম্‌নিবাস প্রথম খণ্ড.pdf/৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(: Ե- মোহন অমনিবাস পারলেন না। আপনারা বিলাত থেকে আসেন, রাজপ্রাসাদে বাস করেন, অসংখ্য ঝিচাকরের সেবা পান, প্রচুর অর্থ উপার্জন করেন, আপনাদের স্বামীরা সম্মান, পদমর্যাদা, শক্তি দিয়ে প্রকৃত দেশকে দেখতে দেয় না আপনাদের। আপনারা যতটুকু দেখতে পান, সেটুকুর মাঝে প্রকৃত দেশ নাই। দেশের কৃত্রিম ছবি দেখে প্রতারিত হন।” মেমসাহেব কহিলেন, “বুঝিয়ে দিন?” মোহন ব্যথিত হাস্যে কহিল, “দু-একটা উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছি আপনাকে। আপনি নিশ্চয়ই সংবাদপত্রে এক ৭৫ বৎসরের বৃদ্ধ জমিদারের বিবাহ-কাহিনী পড়েছেন?” “হ্যা, পড়েছি। আপনি যাকে নিরস্ত না হ’লে, মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করবেন, তারই কথা তো?” মেমসাহেব কহিলেন। “হ্যা তারই কথা। কি অত্যাচার একবার কল্পনা করুন। পনেরো বছরের একটা শিশুমেয়েকে এই ধনবান পিশাচ লালসায় বশীভূত হয়ে, অর্থ-বলে, লোকবলে, আইনের-বলে, বলী হয়ে সমাজের বুকের ওপর বসে;হত্যা করবার ষড়যন্ত্র করেছে। একে হত্যা বলবো নাতো কি বলবো, ম্যাডাম ? হত্যার চেয়েও নির্মম, একটি শিশু-বালিকার জীবন অভিশপ্ত হয়ে থাকবে। সারা জীবন বৈধব্যের নিষ্ঠুর আইন কানুনে একটি তরুণ-প্রাণ নিম্পিষ্ট হবে! “এই আমার বঙ্গ-জননীর একটি মূর্তি। অন্য শত শত মূর্তিতে মা আমার বক্ষে চিতার আগুন জ্বেলে বসে আছেন! চারদিক অন্ধকারে ছেয়ে এসেছে। একটু আশার আলো কোনো দিকেই দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না। ক্ষমতার লোভে, স্বার্থের জন্য দেশের মঙ্গল, দেশের শুভ, জাহান্নামে পাঠিয়ে দিয়ে দেশের নেতারা পরস্পরের টুটি চেপে ধরেছে। পরস্পরে অকথ্য ভাষায় গালাগালি ক’রে আপন-আপন নীচতা প্রকাশ করছে। ভণ্ডের দলে আজ দেশ ছেয়ে গেছে। শুধু নিজের স্বার্থ দেশের নামে লোক ঠকিয়ে নিজেদের স্বার্থ পূরণ করছে অধিকাংশ তথাকথিত নেতা। এখন জনে জনে নেতা হয়ে দাঁড়িয়ে গলাবাজি আরম্ভ করছে। নিজেদের দুর্বলতা, নিজেদের চৌর্যবৃত্তি ঢাকবার জন্য মিথ্যার বেসাতি আরম্ভ হয়েছে! অনেকে প্রকাশ্যে গভর্নমেন্টকে আক্রমণ কোরে বাহবা নিচ্ছে, গোপনে গভর্নমেন্টের নিকট উপস্থিত হয়ে নিজেদের উৎসর্গ করেছে। ধর্মের নামে কত অধৰ্ম যে বাঙলার মঠে, মন্দিরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, তার আর ইয়ত্তা নেই আঁজ বাঙলার তরুণ, তরুণী, বৃদ্ধ চরিত্র হারিয়ে একটা হীন ক্ষুধার তাড়নায় দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে ছুটেছে। আজ বাংলা জুড়ে ধনীর অত্যাচার, সবলের পীড়ন তাণ্ডব রাজত্বের শুরু করেছে। বীভৎসতা বাড়িয়ে তুলেছে। আমি তাই বিদ্রোহী, আমি তাই দস্য, আমি তাই অনিয়ম, ধুমকেতুর মত উদয় হয়েছি। যেখানে অবিচার, সেখানে নৃশংসতা, যেখানে কুৎসিত বীভৎসতা সেখানেই আমি ছুটে যাই, আমার বক্ষের রক্ত উন্মাদ হয়ে নৃত্য করতে থাকে, আমি মৃত্যুর মত দুর্বার হয়ে ঝাপিয়ে পড়ি। আমি দস্য, আমি চোর, আমি অনিয়ম। হা-হা-হা! হা-হা-হা!” মেমসাহেবের হৃদয়ের রক্ত জল হইয়া গেল। তিনি সভয় কম্পিত হস্তে চক্ষু আচ্ছাদন করিলেন। অট্টহাস্য দুই কর্ণে ভয়াবহ শব্দ তরঙ্গ উত্থিত করিয়া সারা সত্তাকে কম্পিত করিয়া তুলিল।