পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র

নিমন্ত্রণসভায় Miss H-দ্বয় রূপসীশ্রেষ্ঠ ছিলেন। কিন্তু তাঁরা হুজনেই কেমন চুপচাপ গম্ভীর হয়ে ছিলেন। বড়ো যে মেশামেশি হাসিখুশি তা ছিল না। ছোটো মিস একটা কৌচে গিয়ে হেলান দিয়ে বসলেন, আর বড়ো মিস দেয়ালের কাছে এক চৌকি অধিকার করলেন। আমার বোধ হয়, তার কারণ আমরা দুই-এক জন ছাড়া ঘরে আর কেউ যুবক ছিল না। তরুণনেত্র তাঁদের রূপ ও সাজসজ্জা যেমন উপভোগ করতে পারে এমন তো আর চসমা-চক্ষু পারে না। যা হোক, আমরা দুই-এক জনে তাঁদের আমোদে রাখবার জন্যে নিযুক্ত হলুম। দুর্ভাগ্যক্রমে আমি কথোপকথনশাস্ত্রে তেমন বিচক্ষণ নই, এখানে যাকে উজ্জ্বল (bright) বলে তা নই, অনর্গল গল্প হাসি আসে না ও আকারে-ইঙ্গিতে কথার আভাসে আমি রূপসীকে জানিয়ে দিতে পারি নে যে, আমার চকোরনেত্র তাঁর রূপের জ্যোৎস্না ও আমার কর্ণচাতক তাঁর বাক্যধারা পান করে স্বর্গসুখ ভোগ করছে। বরঞ্চ এক-এক সময় তাঁরা আমার গম্ভীর মুখ ও সংক্ষিপ্ত কথাবার্তা শুনে তার উলটো স্থির করেন। এ রকম অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়; কেননা আমার হৃদয় বাস্তবিক অত্যন্ত ‘gallant’, যদিও আমার বাইরের ভাব দেখলে লোকের মন ঠিক তার উলটো সিদ্ধান্তে উপস্থিত হবে। গৃহকর্তা একজন সংগীতশাস্ত্রজ্ঞতাভিমানিনী প্রৌঢ়া মহিলাকে বাজাতে অনুরোধ করলেন, তিনি এই অনুরোধের জন্যে এতক্ষণ আগ্রহের সঙ্গে অপেক্ষা করছিলেন। গৃহের মহিলাদের মধ্যে তাঁর বয়স সব চেয়ে বেশি, এই জন্যে তিনি সব চেয়ে বেশি সাজগোজ করে এসেছিলেন— তাঁর দু হাতের দশ আঙুলে যত আংটি ছিল সভাস্থ সকল লোকের আঙুলের আংটির সমষ্টি তার অর্ধেক হবে। কিন্তু হাজার সাজসজ্জা করুন, তিনি বেশ জানতেন যে তাঁর রূপের

৯৪