পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সপ্তম পত্র: পাদটীকা



১১৯

    কথার একটুও উল্লেখ না করাতে দেশীয় লোকের চক্ষে একরূপ ধূলি দেওয়া হইয়াছে— প্রকারান্তরে বলা হইয়াছে যে, বিবিদিগের অনুকরণ করিলেই আমাদের কুলরমণীরা নিষ্কণ্টকে স্বাধীনতাপথে বিচরণ করিতে পারিবেন। আমরা সেই ধূলি অপনয়ন করিবার জন্যই বলিতেছি যে, যখন স্বাধীনতার সঙ্গে শোভন লজ্জাশীলতা, বিনয়, সরলতা, গুরুজনের প্রতি ভক্তি, নীচের প্রতি দয়াদাক্ষিণ্য, অপ্রগল্‌ভতা, ঔদ্ধত্যবিহীনতা ইত্যাদি গুণসমূহ থাকিবে তখনই জানিবে যে তাহা প্রকৃত স্বাধীনতা— ইংলন‍্ডীয় স্ত্রীস্বাধীনতা তাহা হইতে বহুদূরে স্থিতি করে। বোম্বাই দেশে যেমন স্ত্রীস্বাধীনতা আছে সেরূপ তীব্রতাবিহীন নির্বিষ স্ত্রীস্বাধীনতা যদি লেখকের অভিপ্রেত হইত তবে তাহার প্রতিবাদ করা দূরে থাকুক তাহা আমরা অতি আদরের সহিত গ্রহণ করিতাম। যে স্ত্রীস্বাধীনতার নামের দোহাই দিয়া শত সহস্র স্বেচ্ছাচারিতা নিত্য নিত্য পার পাইয়া যাইতেছে সে স্ত্রীস্বাধীনতার নাম শুনিলেই আমাদের আপাদমস্তক শিহরিয়া উঠে। ভা. স.

    অর্থাৎ, আমাদের আপনার দেশের রাজ্যশাসন-প্রণালী স্বদেশীয় লোকের আয়ত্তাধীন নহে। তাহা যদি আমাদের আপনাদের আয়ত্তাধীন হয়, তাহা হইলে আমরা রাজনীতিবিষয়ক স্বাধীনতা প্রাপ্ত হই। শূন্যগর্ভ উপাধির টানে পড়িয়া আমাদের দেশের লোক স্বাভিপ্রেত শিক্ষালাভে বঞ্চিত হয় ও যেরূপ শিক্ষা তাহাদিগকে জোর করিয়া গিলাইয়া দেওয়া হয় তাহাই তাহারা কণ্ঠস্থ করে। শিক্ষাদান যদি আমাদের আপনাদের অভিপ্রায়-মাফিক হয় তবেই আমরা শিক্ষাবিষয়ক স্বাধীনতা প্রাপ্ত হই।
     কোট হ্যাট পরিলে কালোয় কালোয় মিশিয়া বাঙালিকে ভূতের মতো দেখিতে হয়, তবু তাহা ভালো— কেন? না, যেহেতু তাহা ইংরাজ-পছন্দ! রুচিরও কখনও কখনও দাসত্বশৃঙ্খল পরিতে সাধ যায়। রুচি যদি আমাদের আপনাদের আদর্শ-মাফিক হয়, অন্যের ধামা-ধরা না হয়, তবেই আমরা রুচিবিষয়ক স্বাধীনতা প্রাপ্ত হই। ভা. স.

    বটেই তো; ইংরাজদের অধীনে বাস করছি বলেই তো আমরা আমাদের স্ত্রীদিগকে তাহাদের সমক্ষে বাহির করিতে সংকুচিত হই। আমাদের