পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সপ্তম পত্র: পাদটীকা
১২১

    প্রতি ওরূপ ব্যবহার করিত, তবে কাণ্ডটা কী হইত বলো দেখি। এই সব বিচারকর্তার হস্তে যখন আমাদের ধন প্রাণ মান নির্ভর করিতেছে তখন স্ত্রীস্বাধীনতাতে কি আর রুচি হয়? বরং একজন কেরানির পক্ষে বহুমূল্য ইংরাজি আসবাব কেনা শোভা পায়, কেননা তাহাতে সে কেবল ধনে এবং পরিশেষে প্রাণে মারা যায় মাত্র; কিন্তু একজন রাজরানীর পক্ষেও স্ত্রীস্বাধীনতা শোভা পায় না, কেননা অমূল্য কুলমানের বিনিময় ভিন্ন আমাদের দেশে স্ত্রীস্বাধীনতা কিনিতে পাওয়া যায় না। ইহার কারণ আর কিছুই নহে— জেতজাতি জিতজাতির কুলমানের মূল্য অতি যৎসামান্য মনে করে; আমাদের ভদ্রলোকের স্ত্রীদিগকে আয়াদেরই সামিল মনে করে— তা চেয়ে নিচু বৈ উঁচু মনে করে না। কোনো বাঙালি ভদ্রঘরের স্ত্রী দুর্ভাগ্যবশতঃ কতিপয় সভ্য ইংরাজমণ্ডলীর সঙ্গে এক টেবিলে খানা খাইতে বসিয়াছিল, সেই সভ্যমণ্ডলীর মধ্যে কেহ কেহ বলা কহা করিতে লাগিলেন যে, ‘শেষকালে মেৎরানির সঙ্গে আমাদের এক টেবিলে খানা খাইতে হইল!’ বিদেশীয় রাজ্যে বাস করাতেই আমাদের ভাগ্যে সময়ে সময়ে ঐরূপ ঘটে; ম্যাঞ্চেস্টরের একজন তাঁতির ছেলে যেখানে আমাদের দেশের ভদ্রবংশীয় কায়স্থকন্যাকে মেৎরানি বলিতে কিছুমাত্র কুণ্ঠিত হয় না, সেখানে ভদ্রবংশীয় স্ত্রীলোকদিগকে কত সাবধানে আগলিয়া রাখা কর্তব্য তাহা কি আর বলিবার কহিবার বিষয়? ঠিক বিপরীত পৃষ্ঠ দেখিতে চাও তো বলি শুন— আমাদের জ্ঞাতসারে একবার কোনো নৌকাযাত্রী-ভদ্রলোকের নৌকার তলা ফুটা হইয়া যাওয়াতে তিনি স্ত্রী-পুত্র-সমভিব্যাহারে তাড়াতাড়ি ডাঙায় উঠিতে বাধ্য হইয়াছিলেন; ডাঙায় কতকগুলি কুঁড়েঘর ও চাল-ডালের দোকান ছিল; তথাকার সকল লোকে মিলিয়া অতি যত্ন-পূর্বক স্ত্রীলোকটির সম্মান রক্ষার জন্য একটি কুঁড়ে ঘরের চার দিকে ঘের-ঘার দিয়া দিব্য একটি নিভৃত স্থান নির্দেশ করিয়া দিল এবং আবশ্যক যত-কিছু সকলেরই সহায়তা করিল, পারিতোষিকের কথা একবার মুখেও আনিল না; যে ব্যক্তি ঘর ছাড়িয়া দিয়াছিল সে ঘরভাড়া-স্বরূপ যাহা পাইল তাহাতেই সন্তুষ্ট। দেখো আমাদের দেশের চাষাভুষা ইতর লোকেরাও কুলস্ত্রীকে কিরূপ সম্মানচক্ষে দেখে; ইহা ইউরোপ দেশের অতি ভক্তিপূর্ণ