এর আগে তোমাদের যে-সব চিঠি পাঠিয়েছি তাতে যখন যা মনে হয়েছে বলেছি, এখন সেইগুলোকে আর-একটু শৃঙ্খলবদ্ধ করে লিখতে চাই। এখেনে কী কী দেখে আমার মনে কিরকম সংস্কার হল, আমি কী নতুন জ্ঞান লাভ করলুম, আমার মনে কী নতুন মত গড়া হল ও কী পুরোনো মত ভেঙে গেল, তাই লিখতে চেষ্টা করব। অতএব এবারকার চিঠির প্রধান নায়ক হচ্ছেন ‘আমি’। প্রথম, থেকে শেষ পর্যন্ত— ‘আমি’। সুতরাং খুব সম্ভব যে, এই চিঠির কাগজের চার পৃষ্ঠা —পূর্ণ অহমিকা পড়তে পড়তে অর্ধ পথে তোমার গা ঝিমিয়ে আসবে, চোখের দ্বার রুদ্ধ হয়ে যাবে ও নাসারন্ধ্র হতে একটা বেসুরো কোলাহল উত্থিত হতে থাকবে। ‘আমি’ পদার্থের মতো প্রিয় ও আমোদজনক আর কী হতে পারে বলো। কিন্তু আমরা সকল সময়ে বিবেচনা করি নে যে, ‘আমি’ আমারই কাছে ‘আমি’, কিন্তু তোমার কাছে ‘তুমি’ বৈ আর কিছুই নয়। এই রকম সাত পাঁচ ভেবে ‘আমি’ বলে একটা বস্তুকে সহসা তোমাদের সভার মধ্যে নিয়ে গিয়ে বলপূর্বক খাড়া করে তুলতে আমার কেমন সংকোচ বোধ হচ্ছে। বিলেত সম্বন্ধে আমার নিজের যৎসামান্য অভিজ্ঞতার সারাংশ প্রকাশ করতে প্রস্তুত হয়েছি। এইখানে একটা কথা বলে রাখি, কথাটা কিছু গম্ভীর ছাঁচের। অভিজ্ঞতা বলতে কী বোঝায়? কতকগুলি বিশেষ ঘটনার বিষয়ে জ্ঞান সংগ্রহ করা ও তার থেকে একটা সাধারণ মত প্রতিষ্ঠা করে নেওয়া। আমি অতি বিনীত ভাবে নিবেদন করছি যে, যে দিক থেকে দেখো, আমার অভিজ্ঞতার মূল্য বড়ো অধিক নয়। প্রথমতঃ, আমি এখেনে এত অধিক দিন নেই ও এত বিশেষ সুবিধে পাই নি যা থেকে এখানকার সমাজের অনেক দেখে শুনে নিতে পারি; দ্বিতীয়তঃ, বিশেষ ঘটনাবলী থেকে একটি যথার্থ সাধারণ মত তৈরি
পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬২
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র
১৪২