পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
নবম পত্র

এসে আমার চৌকির পিছন দিক থেকে আমার কাঁধে চড়ে বসবার বন্দোবস্ত করছে, তাকে কাঁধে চড়তে দেখে সু—র জেদ হল সেও কাঁধে চড়বে, অবশেষে দুজনে আমার দুই কাঁধে চড়ে বসেছে— আমি তো এই অবস্থায় লিখছি। তোমরা এ কথা শুনে হয়তো অবাক হয়ে গেছ— বিশেষতঃতুমি যে শাসনভক্ত, তোমার চুল হয়তো দাঁড়িয়ে উঠেছে। এ ছেলেদের পেলে তুমি দিন-কতক পিটিয়ে মনের সাধ মেটাও— না? দুরন্ত ছেলে তুমি দু চক্ষে দেখতে পারো না। তুমি চাও— ছেলেরা গুরুলোকদের কাছে চুপচাপ করে ঘাড়টি গুঁজে বসে থাকবে, কথা জিজ্ঞাসা করলে তবে কথা কবে, কথা কবার সময় গলার স্বর অত্যন্ত নিচু হবে, গুরুলোকদের সাক্ষাতে কোনো প্রকার নিজের মত ব্যক্ত করবে না,[১] তাঁদের অত্যন্ত ভক্তি ও মান্য করবে ইত্যাদি। এ যে শুধু ছেলেপিলেদের প্রতিই খাটবে তা নয়, গুরুলোকদের কাছে লঘু লোক মাত্রেরই এই-সকল কর্তব্য। তোমার মত হচ্ছে: লালনে বহুবোদোষাস‍্তাড়নে বহুবোগুণাঃ, তস্মাৎ পুত্রঞ্চ ভৃত্যঞ্চ তাড়য়েন্নতু লালয়েৎ।[২] যা হোক, এই ভক্তির বিষয়ে আমার অনেকটা মতপরিবর্তন হয়েছে, সে বিষয়ে তোমাদের একটুকু বিস্তৃত করে বলছি। আমাদের সমাজের পথে ঘাটে ভালোবাসার চেয়ে ভক্তির প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। আমাদের দেশে পরিবারের মধ্যে গুরুজনের সম্বন্ধে ভালোবাসার সম্পর্ক যেন একেবারে নেই;[৩] সমস্তই ভক্তি ও স্নেহ। বয়সের অতি সামান্য তারতম্যে, সম্পর্কের অতি সামান্য উঁচু-নিচুতে, ভক্তি ও স্নেহের সম্পর্ক স্থাপিত হয়; অত কথায় কাজ কী, আমাদের তা ছাড়া আর কোনো সম্পর্ক মূলে নেই— কেবল যমজ সন্তানদের মধ্যে কিরকম হয় বলতে পারি নে। কিন্তু এ রকম ভক্তিকে ভক্তি নাম দিলে সে নামের অসদ‍্ব্যবহার

১৪৫
  1.  
  2.  
  3.