খেলা করেন, কত যে স্বাধীনতা দেন তার ঠিক নেই; অথচ তাতে কিছু তাদের ‘মাথা-খাওয়া’ হয় নি, পড়াশুনোতে তাদের কিছু মাত্র ত্রুটি নেই।[১] এই তো গেল ছেলেদের কথা। আর বড়োরা যে গুরুর সঙ্গে খুব কম সম্পর্ক রাখে তা বলাই বাহুল্য। এখানে এমন স্বাধীনভাব বর্তমান যে, প্রভু ভৃত্যের মধ্যেও সে রকম আকাশ-পাতাল সম্পর্ক নেই।[২] এখানে চাকরকে গালাগালি দেওয়া ও মারাও যা একজন বাইরের লোককে গালাগালি দেওয়া ও মারাও তাই। আমাদের দেশের মতো চাকরদের বেঁচে থাকা ছাড়া অন্য সমস্ত অধিকার মনিবদের হাতে নেই। চাকর কোনো কাজ করে দিলে ‘thank you’ ও তাকে কিছু আজ্ঞা করবার সময় ‘please’ বলা আবশ্যক।[৩] একবার কল্পনা করে দেখো দেখি, আমরা চাকরদের বলছি ‘অনুগ্রহ করে জল এনে দেও’ বা ‘মেহেরবানি করকে পানি লে আও’ ও জল এনে দিলে বলছি ‘বাধিত রইলুম’।[৪] তুমি হয়ত বলবে ‘thank you’ ও ‘please’ —ও কেবল একটা মুখের কথা মাত্র। কিন্তু জাতীয় আচার ব্যবহার প্রতি পদে যে কথা-দুটোর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় জাতীয় হৃদয়ে তার কারণ নিশ্চয়ই বর্তমান আছে। কিন্তু এ বিষয়ে তোমার সঙ্গে হয়তো জোর করে তর্ক করছি, তুমি হয়তো মানো যে হৃদয়ের মাটিতে শিকড় না থাকলে একটা কথা তিন দিনে শুকিয়ে মারা যায়। এখানে মনিবরা টাকা দেন ও চাকরেরা কাজ করে দেয়, উভয়ের মধ্যে কেবল এইটুকু বাধ্যবাধকতা আছে। তুমি টাকা না দিলে চাকর কাজ করবে না, চাকর কাজ না করলে তুমি টাকা দেবে না। কিন্তু একটুখানি কাজের ত্রুটি হলে তাকে ও তার অনুপস্থিত নির্দোষ পিতা পিতামহ বেচারিদের সম্পর্কবিরুদ্ধ বিশেষণ প্রয়োগ করবার কী অধিকার আছে? এখানে চাকরদের
পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৭৩
অবয়ব
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
নবম পত্র
১৫৩
