পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দশম পত্র

সমাজে মেশে না। এখানেও অনেক সময়ে তাই ঘটবে। রমণীদের জীবন পর্যন্ত যখন স্বামীর ওপর নির্ভর করে তখন স্বামীর মন জুগিয়ে চলবার জন্যে প্রাণপণ করতে, ভালোবাসায় না হোক, দায়ে পড়ে হয়। সম্পাদক-মহাশয় বলেন ‘সে মাত্রা (মেলামেশার মাত্রা) কতটুকু স্বামীই তাহা জানে, স্ত্রী তাহা জানে না’। সে কী কথা! স্ত্রী তাহা জানে না এমনও হয়? হতে পারে, কোনো স্ত্রীবিশেষ কোনো স্বামীবিশেষের মনের ভাব ভালো করে বুঝতে পারে নি; কী করা যাবে বলো? তার জন্যে তাকে কষ্ট সইতেই হবে। কিন্তু তাই বলে চুলটা কাটতে মাথাটা কাটবে কে বলো? দু চার জনের জন্যে সকলে কষ্ট পাবে কেন? অন্তঃপুরবদ্ধ এমন তো অনেক স্ত্রীলোক আছে যারা স্বামীর মনের ভাব ভালো করে আয়ত্ত করতে পারে নি বলে পদে পদে কষ্ট পায়, তবে কি তুমি বিবাহটা একেবারে উঠিয়ে দেবে! অতএব কথা হচ্ছে এই যে, পরপুরুষের সহিত এমন করে মেশা উচিত নয় যাতে করে স্বামীর মনে কু-আশঙ্কা স্থান পায় ও সাধারণতঃ প্রকৃতিস্থ কু লোক বা স্থ লোকে ন্যায্যরূপে কু ভাবতে পারে। এতেও একটা ‘কিন্তু’ আছে। লোকের কু ও সু ভাবা অনেক সময়ে আবার দেশাচারের ওপর নির্ভর করে। একজন স্ত্রীলোক অতি ফিফিনে শান্তিপুরে শাড়ি পরলে কু লোকেও কু ভাবে না, হু লোকেও কু ভাবে না, স্বামীর মনেও কু-আশঙ্কা স্থান পায় না, কিন্তু সে যদি সেই ফিনফিনে শাড়িতে দৈবাৎ ঘোমটা দিতে ভুলে যায় তা হলে কু লোকেও কু ভাবে, সু লোকেও কু ভাবে, আর স্বামীর মনেও হয়তো কু-আশঙ্ক। স্থান পায়! অতএব নিরর্থক দেশাচারের পান থেকে একটু চুন খসলে যদি কু লোকে কু বা সু লোকে কু ভাবে, তা হলে সেটা গ্রাহ্য করা যাবে না। আজ

১৭৭